বিশেষ সংবাদদাতা : দলীয় পদ ও মন্ত্রিত্ব হারানোর পর ধর্মদ্রোহী হওয়ার হুঙ্কার দিয়েছেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। যুক্তরাষ্ট্রে হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে কটূক্তি করে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে ঘোলাটে করেছেন তিনি। এ অবস্থায় দেশে ফিরলে রাজনৈতিক অঙ্গন আবার উত্তপ্ত হতে পারে বলে সরকার ও দল আশংকা করছেন। সরকারি গোযেন্দা সংস্থাগুলোও গতকাল সরকারের উচ্চপর্যায়ের কাছে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে। রোমিং সেল ফোনে ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীদের সাথে লতিফ সিদ্দিকী বলছেন পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তির অপরাধে মন্ত্রিত্ব হারানোর পরও তার কোনো আফসোস নেই। এতে তিনি কষ্ট পাননি। আর এত কিছুর পরও তিনি তার অবস্থানের কোনো নড়চড় করেননি। আমি আমার জায়গা থেকে সরছি না। আমি আমার বিশ্বাসে অটল রয়েছি। আরো শক্ত কথা বলব। এ জন্য যে শাস্তিই দেয়া হোক না কেন, তা মাথা পেতে নেব। আমি ধর্মদ্রোহী হবো। আমার রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে সক্রেটিস হওয়ার সুযোগ আছে। বিভিন্ন সূত্র জানায় হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে কটূক্তির অপরাধে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এখন কলকাতায়। রোববার বিকেলে তিনি কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমান-বন্দরে পৌঁছেন বলে জানা গেছে। তবে যেহেতু তিনি রোমিং সেল ফোনে কথা বলছেন তাই শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না তিনি কলকাতায়? নাকি আমেরিকায়? খবরে প্রকাশ তিনি গত রোববার রাতে দিল্লীর ভিআইপি গেট দিয়ে বের হয়ে তিনি রওনা হয়ে যান দক্ষিণ কলকাতার একটি পাঁচ তারা হোটেলের উদ্দেশে। সেখানেই তিনি রাত্রিবাস করেন। গতকাল সোমবার সেখান থেকে তার অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা। সূত্র জানায় তার কলকাতায় আসার কথা গোপন রাখতে চান লতিফ সিদ্দিকী। এটাও তার একটা নতুন কৌশল বলে নানারকম গুঞ্জন আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। তবে ঢাকায় এখনই ফিরবেন কি না কিংবা ফিরলেও কবে ফিরবেন তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেন নি। কিন্তু এখনই তিনি ঢাকায় ফিরতে পারছেন না এটা নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন লতিফ সিদ্দিকী এখনই দেশে ফিরলে রাজনৈতিক অঙ্গন ঘোলাটে হতে পারে। এমন কি ইসলামী দলগুলো তার দেশে ফেরা নিয়ে হরতালের মতো কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারে। তাই বিষয়টি দলের কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছেন।
সরকারি গোযেন্দা সংস্থাগুলোও গতকাল সরকারের উচ্চপর্যায়ের কাছে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তবেই লতিফ সিদ্দিকী বাংলাদেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে সরকারি দলের বিভিন্ন মহলে আলাপ করে জানা গেছে। এর আগে রোববার দিল্লী থেকে কলকাতায় পৌঁছে বিমানবন্দরের বাইরে লতিফ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন আমি খুব ক্লান্ত। এখন কিছু বলব না। ঢাকায় পৌঁছে যা বলার বলব। প্রধানমন্ত্রী যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নেবেন। পবিত্র হজ এবং তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করে রোববার দুপুরে মন্ত্রিত্ব হারানোর কয়েক ঘণ্টা পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদও হারান লতিফ সিদ্দিকী। মন্ত্রিত্ব আর দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ হারানোয় কোনো আফসোস নেই খোদ লতিফ সিদ্দিকীর। নড়চড় হয়নি তার অবস্থানেরও। তবে তিনি কয়েকটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আগামী দু-একদিনের মধ্যেই দেশে ফেরার প্রস্তুতি রয়েছে। পরিণতি যাই হোক না কেন, সবুজ সংকেত পেলে আমি দেশে ফিরবোই। লতিফ সিদ্দিকী এখনো বেশ দাম্ভিকতার সাথেই কথা বলছেন। তার সাথে কথা বলে দেশের বিভিন্ন দৈনিকে প্রতিদিন রিপোর্ট হচ্ছে। তিনি বলছেন, মন্ত্রী পদে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলে খুশি হবো আর অপসারণ করলে কষ্ট পাব এ কেমন কথা। অবশ্যই কষ্ট পাইনি। তা ছাড়া দোষ তো আমার। যা-ই হোক, এসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার আত্মমর্যাদা আছে। আমার কাছে সম্মানই সবচেয়ে বড়, পদ-পদবি নয়। আমি বেহায়া নই। আমি এসব নিয়ে ভাবি না। আমি সেবক। আমি শেখ হাসিনা ও জনগণের সেবক। তাই প্রধানমন্ত্রী যেভাবে আমাকে রাখবেন, সেভাবেই থাকব। কাজ করব। এতে কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে কৌশল হিসেবে আমার নেতা শেখ হাসিনা যা কিছু করেছেন, তার সবটাই সুন্দর। আর আমার দৃষ্টিতে, দেশ পরিচালনার বেলায় দেশে একমাত্র যোগ্য মানুষ হলেন শেখ হাসিনা। বয়সে তিনি আমার ছোট হলেও তার দুই পা টিপে দিতাম। তিনি যে কীভাবে সাপ-বিচ্ছু পরিবেষ্টিত হয়ে চলছেন। লতিফ সিদ্দিকী বলেন, দল থেকে একেবারে বহিষ্কার না করলে খুশি হবো। মন্ত্রী ও সভাপতিম-লি থেকে বাদ পড়লেও দলের একজন কর্মী হিসেবে আমার কাজ করার অধিকার থাকা উচিত। তবে আমার দল আমি করব। লেখালেখি করব। দল শোকজ করলে অবশ্যই জবাব দেব।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, সবার কাছে আমি আগে ভালো ছিলাম। এখন আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে। এ কারণে আমাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। যৌবনে বহু বছর জেলে ছিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি। এখন আমার বয়স ৭৬। সে তুলনায় এখন তো কারাবাসে আমার কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। তিনি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন না বলেও জানান। তিনি বলেন, যা ঘটার ঘটুক এবং ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী বললে চুপচাপ থাকব। আমি তার তাকে বিব্রত করব না। তবে আমি বেঁচে গেছি। আর টানতে পারছিলাম না। হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার জায়গা থেকে সরছি না। আমি আমার বিশ্বাসে অটল রয়েছি। আগামীতে আরও শক্ত কথা বলব। এ জন্য যে শাস্তিই দেওয়া হোক না কেন, আমি তা মাথা পেতে নেব। আমি ধর্মদ্রোহী হবো। আমার প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে সক্রেটিস হওয়ার সুযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার বিষয়ে বলেন, কোন মুখে তার সঙ্গে কথা বলব? আমি তাকে কম কষ্ট দিয়েছি? তার সঙ্গে কথা বলতে আমার লজ্জা লাগে না? তবে আমি কখনই তাজউদ্দীন আহমদ হবো না। শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকব। প্রয়োজনে তার জন্য জীবন দেব। জীবনে-মরণে শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকব। তিনি যখন ডাকবেন, তখনই তার পেছনে থাকব। তাকে অনুসরণ করব। আমাকে কিনতে হবে না। দেশে তাকে ঘিরে সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে কোনো ক্ষোভ আছে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে কি একজন লোকও নেই যে তিনি প্রশ্ন করে জানতে চাইবেন, আমার বক্তব্যের খ-িত অংশ কেন প্রকাশ করা হলো? কেন পুরো বক্তব্য প্রকাশ করা হলো না? তা ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে আমি রাজনৈতিক বক্তৃতা দিইনি। আর সেখানে যে এত কালো বিড়াল আছে, তা কি আমি জানতাম। ওটা ছিল একটা সামাজিক অনুষ্ঠান। সেখানে আমি গল্প করেছি। আমি তো কাউকে আঘাত দিয়ে কোনো কথা বলিনি। এ নিয়ে তিনি বিব্রত কি না সে বিষয়ে বলেন, অবশ্যই। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করেছি। দলকে বিপাকে ফেলেছি। নেতাকর্মীদের দুঃখ দিয়েছি। তবে আমি ধর্ম ব্যবসায়ী কাদের সিদ্দিকীর মতো ভীরু নই। আমি ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে অন্যায় কিংবা অপরাধ করিনি। এ জন্য আমার কোনো দুঃখ কিংবা অনুতাপ নেই। কাদের সিদ্দিকী আমার পরিবারের কেউ নন। সুতরাং তার মতামত আমার মতামত নয়। আমি ইহজাগতিক অসাম্প্রদায়িক মানুষ। আমার নেতা ও দল আমার বিরুদ্ধে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু ভ্রান্তপথের পথিক কাদের সিদ্দিকী আমাকে নিয়ে বলার কে?
এদিকে ঢাকায় অবস্থানরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আত্মীয় জানিয়েছেন প্রতিদিনই ঢাকার সব জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামসহ বিস্তারিত পড়ে শোনাতে হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। তাকে নিয়ে যেসব প্রতিবেদন সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করে সে সম্পর্কেই এমন আগ্রহ সাবেক এই মন্ত্রীর। ঘনিষ্ঠ সূত্রটি দাবি করেছে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রতিদিন একাধিকবার ফোন করে তার কাছ থেকে বিভিন্ন খবর জানতে চান। এমনকি দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো তাকে নিয়ে কী কী প্রতিবেদন করছে এবং ওই সব প্রতিবেদনের শিরোনাম কী তা বিস্তারিত পড়ে শোনাতে হয়। দেশের প্রথম শ্রেণীর কয়েকটি বাংলা দৈনিকের নাম ধরে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক এই মন্ত্রী।
লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের নোটিশ
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের নোটিশ দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন। দলীয় সূত্র জানায় গতকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ নোটিশটি প্রস্তুত করা হয়। সৈয়দ আশরাফের তত্ত্বাবধানে এটি তৈরি করা হয়েছে। পরে সেটা গতকাল গণভবনে পাঠানো হয়। দলীয় সভাপতি চিঠিতে কোনো ধরনের পরিমার্জন বা পরিবর্ধন করার প্রয়োজন থাকলে সে ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন। এরপর চিঠিটি রাষ্ট্রীয় ডাকযোগে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ঠিকানায় পাঠানো হবে। হজরত মোহাম্মদ (সা.), পবিত্র হজ এবং তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করে বক্তব্য দেয়ায় গত রোববার মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় লতিফকে। একই দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লির সদস্য থেকেও বহিষ্কার করা হয়। ওই বৈঠকেই লতিফ সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদও স্থগিত করা হয়। কিন্তু শুধুমাত্র দলীয় গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা মানতেই কেন তাকে স্থায়ীভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হবে না, এই মর্মে লতিফ সিদ্দিকীকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি | রবি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Development by: webnewsdesign.com