কিভাবে নামাজের মধুরতা আস্বাদন করা যায়? পর্ব ৬

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০১৪ | ৩:১৮ অপরাহ্ণ | 1043 বার

কিভাবে নামাজের মধুরতা আস্বাদন করা যায়? পর্ব ৬

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলতাফ হোসাইন  , Email: altaf_duet@yahoo.com

images (1)

অনুগ্রহ
এখন পর্যন্ত আমরা সবাই বুঝতে পারছি যে নামাজে অবশ্যই আমাদের আবেগ নিয়ে দাড়াতে হবে; আবেগবিহীন নামাজ এখন আমাদের কাছে অতীত হয়ে গেছে । কারণ আমাদের নামাজ এখন আর শুধু নিয়ম মেনে উঠাবসা করাই নয়; বরং নামাজ মানে মহান আল্লাহতায়ালার সামনে দাঁড়ানো, তার সাথে কথা বলা। আর একটি মাত্র বিষয়ে কথা বলে ইনশা-আল্লাহ আগামী পর্ব থেকে আমরা নামাজের ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিটা অংশ নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করব। যে জিনিসটা নিয়ে আমাদের কথা না বললেই নয় সেটা হল আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদসরূপ দেয়া তাঁর অসংখ্য নিদর্শন সমূহ যা প্রতিনিয়ত আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে চলেছে। এর কোন ভুমিকা টানার প্রয়োজন নেই| আল্লাহতায়ালা বলেন:
“যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না।” [সুরা ইবরাহীম ১৪:৩৪]
যখনই আমরা এই আয়াত শুনি তখনই এটা আমাদের ভাবিয়ে তোলে আমাদের যা আছে সেসব নিয়ে; আমাদের ঈমান থেকে শুরু করে পরিবার, সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি; এছাড়াও যেসব জিনিস আমরা আমাদের জন্য অবধারিত ছিলো বলে ধরি যেমন কথা বলতে পারার ক্ষমতা, হাটা-চলার ক্ষমতা, দেখতে পাবার ক্ষমতা, শুনতে পাবার ক্ষমতা আরও কত কি। আমরা এসবকে আমাদের নিয়ামত হিসেবে দেখিইনা। এগুলোর আসল গুরুত্ব অনুভূত হয় যখন এগুলোর কোন একটি ছাড়া নিজের জীবন কল্পনা করব তখন; তখন বুঝে আসবে কত বড় নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিয়ে রেখেছেন। অথচ তাঁর প্রতি আমরা কত অকৃতজ্ঞ। আল্লাহতায়ালা বলেন:
“যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ।”[সুরা ইবরাহীম ১৪:৩৪]
এখন আমরা আরো দুটি নেয়ামত নিয়ে অল্প কিছু কথা বলবো: ঈমান(এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস) এবং আমান(নিরাপত্তা)।
ঈমান
আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, আমরা জানি কে আমাদের পালনকর্তা(রব), এবং এও জানি যে তিনি এক, অদ্বিতীয়। কতো মানুষ তাদের বিধাতাকে তাঁরই বিভিন্ন সৃষ্টির মাঝে তাঁকে খুঁজে বেড়ায়, কতকিছুর পূজাই না সে করে, তা সে পশুপ্রানিই হোক, মানুষই হোক, কোন বস্তুই হোক অথবা নিজের প্রবৃত্তিই হোক। কিন্তু আমরা জানি, নামাজে আমরা আর কোন কিছুর পূজা করি না, শুধু মাত্র তাঁরই ইবাদত করি এবং সরাসরি তাঁরই কাছে এসে দাড়াই। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন:
আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমারই এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থেই নামায কায়েম কর। [তা-হা ২০:১৪]
আমান
দুই ধরনের আমান বা নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলবো আমরা: অভ্যন্তরীণ আর বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি আদর্শ উদাহরণ হল আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আমরা এ ব্যাপারে খুব কমই নজর দেই বা খেয়াল করি| আমাদের শ্বেত রক্তকনিকা সব সময় দেহে প্রবেশ করা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দের ধ্বংস করে চলেছে| চলুন দেখে আসি দেহের ইউটিউবের নীচের ভিডিও থেকে আমাদের দেহের ভিতরে কি হয়?
)
বড় যে সচল কোষটি দেখা যাচ্ছে সেটা হল শ্বেত রক্তকনিকা। গোল গোল প্রায় স্থির গুলো হল লোহিত রক্তকনিকা। আর পিপড়ার মতো কালো ছোট জিনিসটা হল ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। আমাদের অজান্তেই, আমাদের কোন প্রচেষ্টা ছারাই কিভাবে আল্লাহতায়ালার সৃষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমাদের প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে রাখছে, সত্যিই অসাধারণ।
আর বাহ্যিক নিরাপত্তা? আমাদের কেউ কি আজ সকালে ঘুম ভেঙে উঠার সময় ভেবেছে যে কেউ হয়তো তাকে হত্যা করবে? অথবা আজ আমার বাসায় ডাকাতি হবে? কেউ ভাবিনি, আমরা খুব নিশ্চিন্তভাবে ঘুমাই আর ঘুম থেকে উঠি। কল্পনা করুন একবার গাজার(ফিলিস্তিন) কথা, অথবা ইরাকের কথা? যেখানে তারা জানেনা কাল সকালের সূর্য দেখার সৌভাগ্য তাদের হবে কিনা; তারা জানেনা আজ রাতেই তাদের থাকার জায়গায় বিমানহামলা হবে কিনা, জানেনা কখন ঘাতক বুলেট এসে প্রাণ নিয়ে যাবে, তারা জানেনা কবে এই অত্যাচার, এই জুলুম থামবে। যদি বাহ্যিক নিরাপত্তা না থাকতো তাহলে কি হত তা আসলে কল্পনা করে বোঝানো সম্ভব না যদি সত্যিই তাদের জন্য না ভাবেন। আর আল্লাহতায়ালা আমাদের এত নিরাপদে রেখেছেন, এতো আরামে রেখেছেন যে আমরা তাঁকে ধন্যবাদ দিতেও ভুলে যাই, মনে করি এসব তো আমাদের প্রাপ্য ছিল।
হায়া
এখন আরেকটি আবেগ নিয়ে কথা বলবো, সেটা হল-হায়া, অথবা দুর্বল অনুবাদ হিসেবে বলা যেতে পারে লজ্জাবোধ। নামাজে এই বোধটাকে আমাদের মাঝে নিয়ে আসা উচিত। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে-আল্লাহ্তায়ালার কাছে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? এ প্রশ্নের উত্তর হল কারণ আল্লাহ আমাদের উপর ধৈর্যধারণ করে আছেন। আমরা যা করি তারপরও ধৈর্যধারণ করা শুধু তাঁর পক্ষেই সম্ভব। তিনি আমাদের হাত, পা, চোখ, নাক, মুখ সহ সবকিছু দান করেছেন, কিন্তু আমরা সেসব দিয়েই তাঁর অবাধ্যতা করি, পাপ কাজ করি, সীমালংঘন করি; তারপরও তিনি ধৈর্য ধরেন, সবার সামনে উন্মোচিত না করে আমাদের দোষগুলোকে তিঁনি গোপন রাখেন, আবার তৎক্ষনাত শাস্তিও দেন না। এ সবের পরেও, তিনি আমাদের তাওবা কবুল করেন; শুধু তাইই নয়, তিঁনি তাঁর বান্দার কোন আবদার ফিরিয়ে দিতেও লজ্জা বোধ করেন, যখনই বান্দা তাঁর কাছে কিছু চায় তিনি তা দিয়ে দেন অথবা জান্নাতে তার জন্য আরো বেশী কিছু নির্ধারণ করে রাখেন, যা নবী(সা:) বলে গেছেন| তাহলে আমরা কি লজ্জিত না হয়ে তাঁর সামনে নামাজে দাঁড়াতে পারি?
আল্লাহ আমাদের নামাজ কে নিখুঁত ভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন| আমীন|
[চলবে….(ইনশা-আল্লাহ)]
তথ্যের সূএ: আল কুরআন ডট কম, কুরানের আলো ওয়েব।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com