কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব -৫

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১:৪৫ অপরাহ্ণ | 991 বার

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়?  পর্ব -৫

 

প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলতাফ হোসাইন Email: altaf_duet@yahoo.com

ভালোবাসা

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা যত বেশী হবে, নামাজে খুশুও তত বাড়তে থাকবে| যখন অনেক পছন্দের

মানুষের সাথে দেখা হয় তখনকার অনুভূতি আর সাধারণ মানুষের সাথে দেখা হওয়ার অনুভূতির

বিস্তর ফারাক আছে|

আগের লেখাতে আমরা উল্লেখ করেছি যে, কারো প্রতি ভালোবাসা মূলত তার সৌন্দর্য, গুনাবলী

এবং তার করা সাহায্য থেকে সৃষ্টি হয়; এবং আল্লাহতায়ালা এই তিনটি ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ

মর্যাদায় অধিষ্ঠিত| আমরা তার সৌন্দর্যের কথা তো আগেই বলেছি; কিন্তু তাঁর গুনাবলী কি

কি? কিংবা তিনি আমাদের জন্যে কিই বা করেছেন? আমরা জানি একটা মানুষের চরিত্র বা তাঁর

দোষ-গুন আমাদের সামনে আসে যখন আমরা তাদের সাথে চলাফেরা করি, তাদের সাথে মিশি|

তাহলে আমরা আল-হালীম(সবচেয়ে বড় ধৈর্যধারণকারী), আর-রহীম(পরম করুনাময়) আল-

কারীম(যিনি উদারতায় সর্বশ্রেষ্ঠ) আল-ওয়াদুদ(যিনি সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন) সম্পর্কে

কি জানি আর কি বলতে পারি?

আল্লাহর সাথে সম্পর্ক:

ইবনে আল-কায়য়িম বলেন আমরা তাঁর করুনা সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারি যখন তিঁনি তার

বান্দাদের সাথে অতি মধুর সুরে কথা বলেন| যখন তিনি সীমালংঘনকারীদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন

তখন তিঁনি বলেন না যে “ওহে পাপিষ্ঠ!” বরং তিঁনি বলেন:

“হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু|”  [আল-জুমার ৩৯:৫৩]

খেয়াল করুন কিভাবে মহান আল্লাহতায়ালা কিভাবে আমাদের সাথে কথা বলছেন| তিঁনি আমাদের

চোখ দিয়েছেন, নাক দিয়েছেন, কান দিয়েছেন, মুখ সহ অন্য সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়েছেন;

তারপর আমরা সেগুলো দিয়েই তাঁর আদেশ অমান্য করে চলেছি, তারপরও তিনি আমাদের শাস্তি

দিচ্ছেন না; বরং তিনি ধৈর্যধারণ করে আমাদের তাঁর দিকে ফিরে আসার সুযোগ দিয়ে চলেছেন|

আবার যখন আমরা তাঁর কাছে হাত তুলে তাওবা করি, ক্ষমা প্রার্থনা করি তিঁনি আমাদের সকল

পাপ এমনভাবে মুছে দেন যেনো তা হয়তো কখনো করাই হয়নি|

একবার ভেবে দেখুন কিভাবে আল্লাহতায়ালা আমাদের কতবার কত বড় বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে

দিয়েছেন| এমন কতো সময় গেছে যে আপনি ভেবেছেন কত বড় সর্বনাশই না হয়ে গেলো, আল্লাহর

কাছে কতইনা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অথচ পরে সবকিছুর পরিনাম দেখে বলেছেন “হায়

আল্লাহ, সকল প্রশংসা তোমারই, তুমি যা করেছিলে তা ভালোর জন্যই করেছিলে|” কল্পনা

করুনতো যে কেউ আপনাকে একটা উপহার দিলো, আপনার তা পছন্দ হলনা এবং আপনার

আচরণেই তা তাকে বুঝিয়ে দিলেন যে আপনার এই ফালতু উপহার মোটেও পছন্দ হয়নি| আর পরে

যখন তা আপনার উপকারে আসলো আপনি তার কাছে গেলেন আর হাত ধরে বললেন, “অনেক অনেক

ধন্যবাদ, তোমার উপহারের জন্য আজ বেঁচে গেলাম|”

ইবনে আল-কায়য়িম বলেন, “আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে অনেক সাবধানী, কিন্তু তাঁর বান্দা

তাঁর সামনে একটুকুও লজ্জ্বা বোধ করেন না|” আল্লাহ হাজার হাজার নবী রাসূল পাঠিয়েছেন যাতে

আমরা সরলপথে তাঁর দিকে চলতে পারি, তিঁনি নিজে প্রতি রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশে সর্বনিম্ন

আসমানে নেমে এসে জিগ্যেস করেন কেউ কি আছে যে আমার কাছে কিছু চায়? কেউ আছে যে তাওবা

করবে? আর তিঁনি তাকে মাফ করে দিবেন| আর এসব কিছুই তিনি করেন শুধু আমাদের জন্য, আমরা

না থাকলেও তাঁর কিছু যায় আসে না| আমাদেরই তাঁর কাছে সকল চাহিদা, সকল প্রার্থনা, অথচ

তারপরও আমরা তাঁর সকল অনুগ্রহকে উপেক্ষা করতে লজ্জাবোধ করিনা|

আল্লাহতায়ালাকে জানা এবং চেনা:

ইবনে আল-কায়য়িম বলেন যে, তুমি যদি আল্লাহতায়ালকে জানো, তাকে তুমি ভালোবাসে ফেলবেই|

যিনি আপনার দূ’আ কবুল করেন, যিনি আপনাকে প্রতিটা কাজের জন্যে পুরস্কৃত করেন, যিনি

ক্ষমা করে দেন, যিনি আমাদের দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখেন, যিনি আমাদেরকে আমাদের

মায়ের চাইতেও অধিক ভালোবাবাসেন তাকে কি ভালো না বেসে পারা যায়?

youtube এর একটি ভিডিও ( http://www.youtube.com/watch?v=btuxO-C2IzE ৮ MB)

আছে দেখে আসতে পারেন| এটা কোন মুভির দৃশ্য নয়, বরং সত্যি ঘটনা| দুজন ব্রিটিশ ব্যক্তি

একটা সিংহ শাবককে ছোট থেকে বড় করেন, বড় হয়ে যাবার পর তারা সিংহটিকে লোকালয়ে

রাখতে না পেরে তাকে আফ্রিকার বনে রেখে আসে| এক বছর কেটে যাবার পর সিংহটাকে তাদের খুব

দেখতে ইচ্ছা হলে তারা আবার সেখানে ফিরে যায়; তাদের কে বলা হয়েছিল যে এতদিন বন্য পরিবেশে

থেকে সিংহটা খুব হিংস্র হয়ে গেছে; কিন্তু সুবহান-আল্লাহ(সকল গৌরব, অহংকার ও মহিমা

আল্লাহর) অনেক খোঁজাখুজির পেয়ে যখন তারা সিংহটির কাছে গেলো; তখন সে তাদের সাথে কি

আচরণ করলো তা না দেখলে বর্ণনা করে বোঝানো সম্ভব না; এমনকি সিংহটি তার সিংহীকেও

তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়|

এই সম্পর্ক কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তোলে যে আল্লাহতায়ালার সাথে আমাদের কি রকম সম্পর্ক

হওয়া উচিত| প্রতিদিন ঘুমের সময় নিজের রুহকে আল্লাহ তায়ালার কাছে সঁপে দেই আমরা, তিঁনি

যদি তা ফিরিয়ে না দিতেন তবে কি আমরা কেউ কিছু করতে পারতাম? প্রতিদিন তিনি আমাদেরকে

আলো বাতাস পানি দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন, প্রতিদিন আমাদের রিজিক এর সুব্যবস্থা করে

দিচ্ছেন; আবার যখন সীমালংঘন করছি, পাপ কাজ করছি, তাওবা করার সাথে সাথে মাফ করে

দিচ্ছেন| আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন:

সৎকাজের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ব্যতীত আর কি হতে পারে? [আর রাহমান ৫৫:৬০]

এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত। [আল-আম্বিয়া ২১:৯০]

এখন যদি আপনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চান, তাহলে আগে ঠিক জায়গায় যোগাযোগ

করে সময় নির্ধারণ করতে হবে, যদি তিনি আপনার সাথে দেখা করতে রাজি হোন তবেই তার সাথে

কথা বলতে পারবেন; এবং এর পরও যদি আপনি তার কাছে কিছু চান তা সে যাই হোক না কেন,

তিনি রাজি হতেও পারেন নাও হতে পারেন| যদি আপনার দাবি পূরণ হয় তাহলে আপনি তার কাছে

খুবই কৃতজ্ঞ হবেন, সবার কাছে তার সুনাম করে বেড়াবেন|

[চলবে…..(ইন শা-আল্লাহ)]

তথ্যের সূএ: আল কুরআন ডট কম, কুরানের আলো ওয়েব।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com