দু’দলের জন্য চ্যালেঞ্জ উপজেলা নির্বাচন

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১০:৪০ অপরাহ্ণ | 753 বার

দু’দলের জন্য চ্যালেঞ্জ উপজেলা নির্বাচন

তালুকদার হারুন : আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্দলীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটের লড়াইয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আটঘাট বেঁধে নামছে মাঠে। দ’ুটি দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে জেতার জন্য মরিয়া। জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার পরিমাপ করতে চায় দু’টি দলই এ নির্বাচনে। আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে পারায় অনেকটাই চাঙ্গা। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরকারের কূটকৌশলের কাছে মার খেয়ে হতাশ। এ নির্বাচনে জিতে তারা নির্বাচনী মূলধারায় ফিরে আসতে চায়। তাদের মতে, এ নির্বাচনে জিতলে দল চাঙ্গা হবে, নেতা-কর্মীরা  উজ্জীবিত হবে। একই সঙ্গে তৃণমূলে দল হবে শক্তিশালী। যা আগামীতে সরকার বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনে কাজে লাগানো যাবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ উঠলে এ নিয়ে নতুন করে আন্দোলনের ইস্যু সৃষ্টি হবে। এমনিতেই সরকার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি শেষপর্যন্তও। এ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবল চাপের মুখে ছিল সরকার। তারা  বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর একজন সদস্য দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এ নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখন উজ্জীবিত। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখন চাঙ্গা। দলের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনে আমরা অনেক ভালো করবো। আওয়ামী লীগ এখনও দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়, এ নির্বাচনের মাধ্যমে আরেক বার তা প্রমাণিত হবে।
এদিকে দু’টি দলই একক প্রার্থী দিতে গিয়ে পড়েছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরীক নেতাদের মধ্যে জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে শরীক দলের মাঠ পর্যায়ের নেতারা প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজ দলের নেতাদের কাছে দাবি তুলে। এই প্রেক্ষাপটে যে উপজেলায় যার জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাকে সেই উপজেলায় প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। জোটের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। এর ফলে একক প্রার্থী মনোনয়নে বিপাকে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই একক প্রার্থী মনোনয়নে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। মাঠ পর্যায়ের চিত্র এখনও ভালো নয়। অধিকাংশ উপজেলায় দলের অভ্যন্তরে কোন্দল রয়েছে। এ কারণে কোন্দল নিরসনে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে একক প্রার্থী রাখতে দলটি মাঠে নামছে। একক প্রার্থী রাখতে দলীয় হাই কমা- থেকে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ৭টি টিম একক প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে কাজ করছে। এছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ প্রেসিডিয়াম ও উপদেষ্টাম-লীর সদস্যরা এ নিয়ে কাজ করছেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন।
এদিকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সমঝোতার মাধ্যমে প্রত্যেক উপজেলায় একক প্রার্থী রাখতে দলের প্রতি জেলা ও উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রুখতে পর পর দু’টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ভূমিকা রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কোন উপজেলায় একাধিক প্রার্থী থাকলে এজন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের দায়ী করা হবে। কেউ যেন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে বিতর্কিত না হন, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন তিনি। দলের একক প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠ পর্যায়ে দলের যে সাতটি টিম কাজ করছে তাদের সহযোগিতা করার জন্যও তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একক প্রার্থী দিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও হিমশিম খাচ্ছে।  দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইতোমধ্যেই একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনে। একক প্রার্থী দিতে বিএনপি হাইকমা-ের নির্দেশ কাজে আসেনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত সপ্তাহে কৃষিবিদদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে জোটের একক প্রার্থী থাকবে। জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্যও তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী রাখতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের একটি টিম কাজ করে যাচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান কাজ করে যাচ্ছেন। যেসব উপজেলায় একাধিক প্রার্থী রয়েছে সেখানে একক প্রার্থী রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গোপন ভোটের ভিত্তিতে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। আমরা স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে একক প্রার্থী মনোনয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, আমরা তৃণমূলে একক প্রার্থী বাছাইয়ে সক্ষম হবো। –

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com