বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি বাংলাদেশ: ক্যানবেরায় বাংলাদেশের স্থায়ী দূতাবাসের নির্মাণ কাজ শুরু না করলে জমির বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে

শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৯:০১ পূর্বাহ্ণ | 1030 বার

বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি বাংলাদেশ:  ক্যানবেরায় বাংলাদেশের স্থায়ী দূতাবাসের নির্মাণ কাজ শুরু না করলে জমির বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে

bd_hc_new_images_stories_2015_11_thumb_medium680_400

 

 

 

 

কূটনৈতিক রিপোর্টার : নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্যানবেরায় বাংলাদেশের স্থায়ী দূতাবাসের নির্মাণ কাজ শুরু করতে না পারলে জমির বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে। এতে বাংলাদেশ সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক আর্থিক ক্ষতি হবে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের এক শুনানিতে ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অথরিটি এই বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করে বলে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব দেশ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত জমিতে দূতাবাসের নির্মাণ কাজ শুরু করতে না পারবে তাদের জমির বরাদ্দ বাতিল করে অন্যদের নামে তা বরাদ্দ দেয়া হবে।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ে দূতাবাসের নির্মাণ কাজ শুরু করতে না পারায় বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত জমি হতে একটি বিরাট অংশ পাশের দেশ ভারতেকে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের দূতাবাসের জমি পাশাপাশি হওয়ায় ভারত এ জমি বরাদ্দ নিয়েছে। ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অথরিটির বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাছ শুরু করতে না পারলে পুরো জমি ভারতের জন্য বরাদ্দ হয়ে যেতে পারে বলে জানা গিয়েছে। এ জমি বাতিল হয়ে গেলে বাংলাদেশ সরকার ভবিষ্যতে আর জমি পাবে না বলে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অথরিটি ক্যানবেরায় অবস্থিত ইরান, রাশিয়া ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলিকে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত প্লটগুলোতে স্থায়ী দূতাবাস ভবন নির্মাণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ঐ নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টের এক শুনানিতে ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অথরিটি এই মতামত ব্যক্ত করেন । তারা বলেন, বাংলাদেশ,ইরান ও রাশিয়া দূতাবাস দীর্ঘ সময়ের পরেও তাদের জন্য বরাদ্দ করা জায়গায় স্থায়ী মিশনের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি। ইরান গত বিশ বছরেও তাদের জমিতে নির্মাণ কাজ শুরু না করায় অথরিটি আগামী বছরের ৩১ মার্চে মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্নের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।

এই বছরের প্রথমে ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অথরিটি ও বাংলাদেশের মধ্যকার স্থায়ী দূতাবাস নির্মাণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি গত এপ্রিলে বাংলাদেশ হাই কমিশন স্বাক্ষর করেছে বলে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত দ্য ক্যানবেরা টাইমস জানিয়েছে এবং অথরিটি আগামী তিন বছরের মধ্যে এই জমিতে কূটনৈতিক ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।

প্রায় তিন দশক পূর্বে ১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান সরকার বাংলাদেশ সরকারকে দূতাবাস নির্মাণের লক্ষ্যে এই স্থানটি গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করে। বাংলাদেশ সরকার জমিটি সেই সময়ে অধিগ্রহণ করে কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়। এর দশ বছর পর ১৯৯৫ সালে জমিটিকে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে ফিরিয়ে  দেয়ার মত চুড়ান্ত করা হয়। হাইকমিশনারের ভাষ্যমতে, সেই সময়ে নির্দিষ্ট সময় পর কাউন্সিল সহ বিভিন্ন ফি ও কিসিÍর টাকা পরিশোধকে অলাভজনক মনে করা হয়েছিল। আর হাইকমিশনে গচ্ছিত নথিপত্রে স্থানটিতে দূতাবাসের কার্যালয় ও হাইকমিশনারের বাসভবন তৈরির সম্ভাব্য পরিকল্পনার ভবিষ্যত সময়কালেরও পরিষ্কার কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।

শুধু এতোটুকু জানা যায় যে, আজ থেকে দুই দশক পূর্বে বাংলাদেশ হাইকমিশনের স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য মনোনীত স্থানটি অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে ফিরেয়ে দেয়া হয়। অযোগ্যতা, অদক্ষতা এবং কয়েকজন ব্যক্তির অবহেলার কারণে বাংলাদেশের বরাদ্দকৃত জমিতে স্থায়ী ভবন নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয় এবং জমিটি অস্ট্রেলিয়ান সরকারকে ফিরেয়ে দেয়া হয়। অতি সম্প্রতি স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশের হাই কমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন ক্যানবেরার ইয়ারালামলাতে দূতাবাসের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি আরও জানান, অস্ট্রেলিয়ান সরকারের প্রস্তাবিত জমিতে বাংলাদেশ সরকারের স্থায়ী দূতাবাস নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। পুরো নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও আগামী তিন-চার বছরে দূতাবাস নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাই কমিশনার।

হাইকমিশনার জানান, ২০১১ সালে প্রাক্তন বাংলাদেশী হাইকমিশনার ক্যানবেরায় বাংলাদেশী দূতাবাসের স্থায়ী কার্যালয় পুনরায় স্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে সেই পূর্ব নির্ধারিত জমিটি পাবার পুনঃআবেদন পেশ করা হয়। তবে, অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে পূর্বের জমিটির কিছু অংশ বাদ দিয়ে বাকীটুকু বাংলাদেশী দূতাবাস নির্মাণের নিমিত্তে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। জমিটির কিছু অংশ ক্যানবেরাস্থ ভারতীয় দূতাবাস ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করার ফলে বাংলাদেশী দূতাবাসের জন্য পূর্বের জমিটির এক তৃতীয়াংশ কম পরিমাণ স্থান মনোনীত করা হয়।

অভিজ্ঞ মহলের মতে প্রায় তিন দশক পূর্বে বরাদ্দ পাওয়া এই জমিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ-দূতাবাসের স্থায়ী ভবন নির্মাণ হলে বাংলাদেশ সরকারের বিরাট অংকের অর্থনৈতিক সাশ্রয় হতো । কারণ গত ত্রিশ বছরে বাংলাদেশ সরকার দূতাবাসের বাড়ি-ভাড়াসহ রক্ষণাবেক্ষণে যে অর্থ ব্যয় করেছে তা দিয়ে জমিতে স্থায়ী  ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতো এবং বিরাট অংকের অর্থ সাশ্রয় হতো।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com