ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সাত ফিফা কর্মকর্তা গ্রেফতার : স্তম্ভিত ফুটবলবিশ্ব

শুক্রবার, ২৯ মে ২০১৫ | ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ | 925 বার

ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে সাত ফিফা কর্মকর্তা গ্রেফতার : স্তম্ভিত ফুটবলবিশ্ব

অনলাইন ডেস্কসুইজারল্যান্ডের জুরিখে আজ শুরু হবে ফিফার ৬৫তম কংগ্রেস। শুক্রবার জুরিখে ফিফার সদর দফতরে সভাপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচনকে ঘিরে বার্ষিক সভায় মিলিত হওয়ার জন্য জুরিখে সমবেত হয়েছিলেন ফিফার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। তারা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি এভাবে আকাশ ভেঙে পড়বে মাথার ওপর। নির্বাচনী প্রচারণা ও সব ধরনের তৎপরতা মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেল এক অভাবনীয় ঘটনায়। বুধবার ভোরে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জুরিখের একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে ফিফার ছয় কর্মকর্তাকে আটক করে সাদা পোশাকের সুইস পুলিশ। এরপর ফিফার সদর দফতরেও অভিযান চালানো হয়। দুর্নীতির দায়ে জুরিখের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফিফার উচ্চপর্যায়ের মোট সাতজন কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছেন। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবিরোধী অভিযান এটি। সুইজারল্যান্ডের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অনুরোধে ফিফার সাত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটককৃতদের যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর কারা হতে পারে।

নয়জন ফিফা কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে মার্কিন বিচার বিভাগ। গ্রেফতার অভিযান শুরুর পর তাদের নাম প্রকাশ করা হয়। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই তদন্ত চালাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। আটককৃত সাতজন হলেন ফিফার সহ-সভাপতি ও কনকাকাফ সভাপতি জেভরি ওয়েব, ফিফার সাবেক সহ-সভাপতি জ্যাক ওয়ার্নার, ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের সভাপতি হোসে মারিয়া মারিন, কোস্টারিকা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এডুয়ার্ডো লি, ভেনিজুয়েলা ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি রাফায়েল এসকুইভেল, কনমেবল সহ-সভাপতি ফিগুয়েরেদো এবং দুই ফিফা কর্মকর্তা হুলিও রোচা ও কস্তাস তাক্কাস। এরা সবাই নব্বইয়ের দশক থেকে ফুটবল সংক্রান্ত বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বলে প্রমাণ হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। বিভিন্ন মার্কিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা দুর্নীতি করেছেন বলেই এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়েছেন। এছাড়া ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ বেছে নিতে ফিফা কর্মকর্তারা ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে সুইস পুলিশ। বিশ্বকাপ সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়টি দেখছে সুইজারল্যান্ডের আইন ও বিচার বিভাগ। কাল ফিফার সদর দফতরে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ জব্দ করা হয়েছে। একই সময়ে মিয়ামিতে কনকাকাফের সদর দফতরে অভিযান চালায় মার্কিন পুলিশ।

যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে মার্কিন বিচার বিভাগ, তাদের মধ্যে নেই বর্তমান ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটার ও মহাসচিব জেরোমে ভালকে। তবে তারাও জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে পারেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার ফিফা সভাপতি পদে নিজের পঞ্চম মেয়াদের জন্য লড়বেন ব্লাটার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলেও ব্লাটারের ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ফেঁসে গেছেন।

ফিফার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। মার্কিন বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ফুটবল সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রায় ১০ কোটি ডলার ঘুষ নিয়েছেন ফিফা কর্তারা। টিভি স্বত্ব কেনাবেচা, বিপণন, পৃষ্ঠপোষকতাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। বিভিন্ন ক্রীড়া বিপণন প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমও এর সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। চারজন আগেই মার্কিন বিচার বিভাগের কাছে অপরাধ স্বীকার করেছেন। এরপরই পৃথকভাবে তদন্তে নামে এফবিআই ও সুইস পুলিশ। দুর্নীতির আরও কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করে কাল শুরু করা হয়েছে গ্রেফতার অভিযান। সভাপতি নির্বাচনের সময়ও তদন্ত চলবে। দুই দেশের পুলিশ ও বিচার বিভাগের এমন সুপরিকল্পিত সাঁড়াশি অভিযানে শুধু ভাবমূর্তি নয়, রীতিমতো অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে ফিফা। সভাপতি নির্বাচনে ব্লাটারের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জর্ডানের প্রিন্স আলী বিল আল হুসেইন বলেছেন, ‘এই দিনটি ফুটবলের কালো দিন হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’ ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ বেছে নিতে কোন মাত্রায় দুর্নীতি হয়েছে, এবার হয়তো সেটা প্রকাশ্যে আসবে।

আন্তর্জাতিক/খেলাধুলা

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com