বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ |
১২:১০ অপরাহ্ণ | 1055 বার
নাইম আবদুল্লাহ: অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি: , বিজয়ের উদ্দীপনা ও দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরবার প্রত্যয়ে ‘এসো বিজয় উল্লাসে মাতি’ এই স্লোগান নিয়ে প্রবাসীদের অন্যতম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আমরা বাংলাদেশী’ গত ২০শে ডিসেম্বর (রবিবার) সিডনি’র ওয়াইলি পার্কে চতুর্থ বারের মতো ‘বাংলা মেলা’র আয়োজন করে।
এবারের মেলা প্রাঙ্গণ দর্শক অতিথিতে ছিল কানায় কানায় পূর্ন। শুধু অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙ্গালীরাই নয়, অন্যান্য ভাষাভাষী অতিথিদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। সিডনির দূর দূরান্ত ছাড়াও -ক্যানবেরা, মেলবোর্ন থেকেও মেলায় অগনিত দর্শকদের সমাগম ঘটে। বিজয় দিবস উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে প্রবীনরাও লাল সবুজের সাজে সজ্জিত হয়ে অংশগ্রহণ করেন এই মেলায়।
মেলা প্রাঙ্গণের চারিদিক ঘিরে ছিল বাঙালী খাবার ও দেশীয় পোশাকের নানাবিধ স্টল। খাবারের স্টল গুলিতে ছিল নানা ধরনের মুখরোচক দেশীয় খাবার পুরি, চটপটি, ফুসকা, পিয়াজু, মোগলাই, হালিম, জিলাপি, সিঙ্গারা বিরানি, রকমারি পিঠা ও মিষ্টি। মুখরোচক দেশীয় খাবার নিয়ে পাটি বিছিয়ে এবং দুর্বা ঘাসে বসে অনেককে খাবার খেতে দেখা যায়। আর তৈরি পোশাকের স্টলগুলিতে ছিল সালোয়ার কামিজ, জামদানি ও অন্যান্য তাঁতের শাড়ির বিপুল সমাহার। মেলায় বিভিন্ন রকমের রাইড বড় দর্শকদের যেমন গ্রাম্য নাগর দোলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে তেমনি ছোট ছোট বাচ্চাদের সারা-বেলা আনন্দে মাতিয়ে রেখেছে। ল্যাকেম্বার ওয়াইলী পার্ক নয়, যেন একটুকরো সবুজ বাংলাদেশ!
বিকাল ৪ টায় আসিফ, মোস্তফা, মাহনাজ ও ফারহানা’র পরিচালনায় এবং ছোট্ট বন্ধু রায়া’র সুকোমল কণ্ঠে কোরআন তেলোয়াতের মধ্যে দিয়ে বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। ছোট্ট সোনামনিরা বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর কলতান এর ছোট্ট বন্ধুরা বিজয় দিবস ও অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসিদের গান, আবৃতি ও ছড়াগান পরিবেশন করে। তারপর ল্যাকেম্বা বাংলা স্কুলের ছেলেমেয়েরা নৃত্য, গান ও আবৃতি দিয়ে শ্রোতাদের বিমহিত করে রাখে।এরপর একে একে গান পরিবেশন করে আল মামুন, নাবিলা, রফিকুল ইসলাম ও রুহুল আমিন । কিশলয় কচিকাঁচা ও ঐকতান সমবেতভাবে শিশু ও বড়দের গান, সমবেত সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর সরদের সাথে গান, তবলা ও আবৃতির সমন্বয়ে এক ভিন্ন ধর্মি পরিবেশনা নিয়ে আসে শুভ্রা, তানিম, অভিজিত ও আসিফ।
জনপ্রিয় ব্যান্ড ৮ নোটস এর পরিবেশনায় ‘ব্যান্ড শো’ উপস্থিত দর্শক ও শ্রোতাদের সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে রাখে। পাশাপাশি আয়োজন করা হয় শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। প্রত্যাশার চাইতেও বেশী সাড়া পড়ে যায় এই প্রতিযোগিতায়। প্রায় ২০০ জন শিশু কিশোর অংশ গ্রহন করে এই প্রতিযোগিতায়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারিদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরন করেন রাশেদ খান, জামিল হোসেন, আব্দুস সামাদ ও মাজহারুল ইসলাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট ও বিজয়ের বীরগাঁথা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন, ল্যাকাম্বা আসনের এমপি জিহাদ ডিব, ক্যানটারবুরি সিটি কাউন্সিলের মেয়র ব্রাইয়েন রবসন, লিবারেল পার্টির নেতা রন ডেলেজিও ও আমরা বাংলাদেশি’র সদস্য মাসুদ খলিল।
মাগরিবের বিরতির পর অর্পিতা সোম ও তার দল গান, কবিতা ও যন্ত্র সঙ্গীতের সাথে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে। তারপর রিদমের সাব্বির হক ও কৃষ্টির শিল্পীদের আয়োজনে ব্যান্ড শো পরিবেশিত হয়। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় র্যাফেল ড্র। রাফেল ড্র পরিচালনা করেন মাহমুদ ইমন, আদি বাশার, জিয়াউল হাসান ও বেলায়েত রবিন। সংগঠনের পক্ষে শিবলী আবদুল্লাহ জানান, ‘আমরা চেষ্টা করেছি একটুকরো বাংলাদেশকে আমদের হৃদয়ে ধারণ করতে, নুতন প্রজন্মের মাঝে আমাদের গৌরবময় ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের বীরগাঁথা ও সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে’। এবারের ‘বাংলা মেলায়’ আমরা বাংলাদেশী গানে গানে ছড়িয়ে দিয়েছে বিজয়ের কথা, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের কথা। দল মত নির্বিশেষে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশ গ্রহণে সিডনি’র ওয়াইলি পার্ক পরিণত হয়েছিল বাঙ্গালীর মিলন মেলায়।