হাসিনা -খালেদার লাভ লোকসান

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ | 837 বার

526d7a5e4f0f9-Untitled-10

 

 

 

 

 

 

Picture- GazipurOnline.Com

আমার একটি নোটসে এক ভাই প্রশ্ন করেছেন, ত্রিশ লাখের বিষয়টা তুলে খালেদার লাভ কি, আবার সেটা নিয়ে এইভাবে রিএ্যাক্ট করে হাসিনারই বা কি লাভ । এই ছোট প্রশ্নটি নিয়ে ভাবলাম । সময় নিয়েই ভাবলাম । বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন তিনি । যথাসম্ভব সংক্ষেপে বিষয়টা বলার চেষ্টা করলাম। । একটু ধৈর্য নিয়ে পড়েন । অনেক কিছু পরিস্কার হেয়ে যাবে, কথা দিলাম।

বিএনপির দৃষ্টিতে খালেদার একমাত্র প্রত্যক্ষ লাভ হতে পারে নিরপেক্ষ , অবাধ ও সুষ্ঠু একটা নির্বাচন আদায় করতে পারলে । অনেকের মত আমারও তাই বিশ্বাস । আর সব তাত্ত্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা সমালোচনায় বিএনপির কোনো লাভ আছে বলে আমি মনে করিনা । এমনকি বিএনপির শরিক জামায়াতেরও কোনো লাভ আসলে নেই । জামায়াত দলগতভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ছিল। যা সবাই জানে । এটা কোনো তথ্যেই মিথ্যা হয়ে যাবে না । জিয়া যখন বহুদলীয় গণতন্ত্র উম্মুক্ত করেন , তখন টেকনিকাল কারনে সবাইকেই রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়। বিলুপ্ত আওয়ামী লীগকেও । সেই সময় জামায়াত সুযোগ নেয়। গোলাম আজমের নাগরিকত্ব আদালতে নিস্পত্তি হয়, যা সরকারী সিদ্ধান্ত ছিল না । মজার বিষয় হচ্ছে জিয়া জামায়াতকে নির্বাচন করার সুযোগ দেননি । ইলেকশন কমিশনে জামায়াত তখন নিবন্ধনই পায়নি ।

পরে , ৮৬ এর নির্বাচনে এরশাদের প্রয়োজনে ও আওয়ামী লীগের পরোক্ষ সহযোগীতায় জামায়াত নির্বাচন করার সুযোগ পায় । স্বাধীন বাংলাদেশে সেটাই জামায়াতের প্রথম নির্বাচন । যে নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে । এবং দেশের ইতিহাসে অন্যতম সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির নির্বাচন বর্জন ।
১৯৯২ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায়, তখন কেবিনেট থেকে ভরা সংসদে একবাক্যে অনেক বিএনপির মন্ত্রী জামায়াতের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি করেন । তারা তখন বলেন , জিয়া যে সুযোগ দিয়েছিলেন, তা জামায়াতের বেলায় প্রযোজ্য না । জামায়াতের মুলনীতি ও রাজনৈতিক ধারা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক । একই বিষয়ে আওয়ামী লীগ এর এমপিরাও একই ধরনের বক্তৃতা দেয়। সম্ভবত তখন জামায়াতের তিনজন এমপি ছিলেন । তারা তখন বলেন , তাদের সেই সময়কার ভূমিকা ও প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন । এখন তারা স্বাধীন বাংলাদেশের সমস্ত নিয়ম মেনেই রাজনীতি করছেন । পরে আর বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কারো পক্ষ থেকেই জোরালোভাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবিটি তোলা হয়নি ।

সেই সংসদের শেষে , বিএনপির বিরুদ্ধে বড় বড় ইস্যু তৈরি হয়। ইয়াসমিন হত্যাকান্ড, ১৮ জন কৃষক হত্যা ইত্যাদি । এসব ইস্যুর মাথায় মুল ইস্যু যুক্ত হয় , তত্ত্বাবধায়ক সরকার । সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াত একাত্ম হয়। তখন জামায়াতের সে কি প্রতাপ । খালেদা জিয়াকে তারা প্রায়ই শ্লোগানে বলতো, ভুরু কাটা পামেলা, আর করিসনা ঝামেলা । নারী নেতৃত্ব হারাম ইত্যাদি । এভাবেই স্বাধীনতার পেরে বিভিন্ন সময়ে , কিছুটা বিএনপির সহযোগীতায় , আবার কিছুটা আওয়ামী লীগের সহযোগীতায় জামায়াত রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এখন অনেকে যেমন বলছে , আওয়ামী লীগই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ , আর সব বিপক্ষ , বিষয় তা তো নয়ই বরং , এত বছর পরে পক্ষ বিপক্ষ দিয়ে কারোরই কোনো লাভ নেই । জামায়াতেরও নেই।

জামায়াতকে নিয়ে আরো ভেবেছি আমি । জামায়াত কিন্তু ব্যাকডেটেড দল না। যথেষ্ট আধুনিক ও তাদের নীতিতে অটল একটি দল। এদের ৪৫ বছর পেছনের রাজনীতি করার কোনো কারন আসলে নেই। এমনকি , তাদের বড় বড় নেতাদের যেভাবে ফাসী হলো, তারা দুয়েকটা হরতাল ছাড়া কিছুই করলো না। জাসদের মত আন্ডারগ্রাউন্ডে তো যাবেই না । সুতরাং খালেদা জিয়া জামায়াতকে খুশি করতে এরকম একটা কথা বলবে এটা একেবারেই বুজরুকি। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ৯৮ শতাংশ প্রভাব আছে । পক্ষে বা বিপক্ষে । সেই হিসেবে পাকিস্তান নিজেই তো চলতে পারে না । তাদের বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলারই ক্ষমতা কম, প্রভাব তো অতি দূর । তাদের আসলে খুশি করার কিছু নেই।

আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ লাভ বলতে , যে কোনো উপায়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন না দেয়াই তাদের লক্ষ‌্য । কেউ স্বীকার করলেও কিছু না , না করলেও কিছু না। আমি অন্তত তাই বিশ্বাস করি । তো, কোনো দল নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে গেলে তাদের কতগুলো তাত্ত্বিক বিষয় সামনে আনতে হয়। মুসোলিনি বলে বেড়াতো, সে না থাকলে ইতালীর জাতীয়তাবাদের মরন হবে । তার ক্ষমতায় থাকাটা জরুরী । সাদ্দাম হোসেন যেমন আরব জাতীয়তাবাদের কান্ডারী মনে করতে নিজেকে । এভাবেই একটা বিরাট ইস্যু দাঁড় করাতে হয়। আমি বলবো, আওয়ামী লীগ সেই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে খেলছে । তাদের লক্ষ্য ও পথ সঠিক আছে। তারা একটা প্রজন্ম ও কিছু মিডিয়া তৈরি করতে পেরেছে , যারা কখোনো উপরে আমি যে সহজ ইতিহাসটা বললাম , সেটা মানতে চাইবে না। এটা ক্ষমতায় থাকতে খুব জরুরী। পাবলিকের আসল মতামত মিডিয়ায় আসতে না দেয়া একটা বিরাট রাজনৈতিক বিজ্ঞান । আওয়ামী লীগ সেক্ষেত্রে সফল। যেটা নিয়ে আমরা এত আলোচনা করি, সেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাধারন পাবলিকের আসলে কোনো মাথাব্যাথা আছে বলে মনে করিনা । পাবলিক তো পাবলিকই । তারা প্রত্যেক আমলেই পাবলিক । ভোটের রাজনীতির হিসেব সম্পূর্ন আলাদা।

কিন্তু রাজনীতি এমন শক্ত মারপ্যাচ, যে বিএনপি এখন এরশাদকে গালি দেয়। তারা এরশাদের সাথে জোট করেছিলো। তারেক নিজে এরশাদের বাসায় গেছে মান ভাঙাতে । আবার এরশাদের সাথে বিএনপির জোটের সময় শেখ হাসিনার বক্তৃতা এখনও আমার কানে বাজে । তিনি বলেছিলেন , নব্বুই এর পরাজিত শক্তি আর ৯৬ এর পরাজিত শক্তি এক হয়েছে। পরাজিত প্লাস পরাজিত সমান পরাজিত । এরশাদকে যে ভয়াবহ গালাগাল করা হত , আওয়ামী লীগের তরফ থেকে । বিশ্ববেহায়া এই বিশ্ববেহায়া সেই। আবার জামায়াত যখন আওয়ামী লীগের সাথে একাট্রা হয়ে আন্দোলন করে, তখন একইভাবে বিএনপি জামায়াতকে আক্রমন করে কথা বলতো । তখন রাজাকার শব্দটা কিছুটা ইউজ হত, মৌলবাদিও।

পলিটিক্স এবসার্ট কিছু না , সলিডও না । এখন যদি জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের জোট করার প্রয়োজন হয়, তবে সেটা করবে আওয়ামী লীগ । হয়তো বলবে, তাদের যুদ্ধাপরাধী যে কজন ছিল ফাঁসি হয়ে গেছে , এখন তো আর তাদের নিতে সমস্যা নেই। ক্লিন দল । তাছাড়া বেশ ধার্মিকও । নামাজ রোজা করে, অসুবিধা কি। পজেটিভ দিক বের করা খুব একটা কঠিন না। বিএনপি এরশাদের সাথে গেলে বলবে স্বৈরাচার ছিল ৯০ তে এখন তো এরশাদ ভাল ।আওয়ামী লীগ বিরাট একটা রিস্ক নিয়েছে যেদিন ভারতের সুজাতা সিং এরশাদকে রাজি করাতে গেল সেদিন। আমরা মেইনস্ট্রিম সাংবাদিকরা বুঝতে পারছিলাম যে বিএনপিকে কোনোভাবেই আর নির্বাচনে আসতে দিবে না। সুজাতা সিং এর সাথে দেখা করার পরে এরশাদ বললেন, সুজাতা তাকে অনুরোধ করেছে যে আপনি নির্বাচন করেন। নইলে জামায়াত ক্ষমতায় চলে আসবে । এটা স্বাধীন একটি দেশের সরকার হতে দিয়েছে । ভাবতে পারেন, এটা পাকিস্তানের কেউ করলে আওয়ামী লীগ কি বলতো ?

আমাদের দেশের দূত যদি দিল্লীতে রাজনাথ সিং কে গিয়ে বলতে নির্বাচন করেন, বা কইরেন না। কি হতো বিষয়টা ? মানুষ তো বোকা না, তারা তো বুঝেই গেল, এ এলাকায় ভারত তাদের স্বার্থে বাই হুক অর কুক , আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায়। এটা খেয়াল করেন, কে , কাকে এবং কাদের স্বার্থে ক্ষমতায় রাখতে চায় ?
এ থেকে পরিত্রানের উপায় যে নাই , তা না । একটা পর্যায়ে সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে পড়ে । নিতে নিতে তাদের প্রয়োজন ফুরায়। অনুপ চেটিয়াই একটা বিরাট অস্র ছিল বাংলাদেশের জন্য। তাকে নুর হোসেনের বিনিময়ে ফিরিয়ে দেয়া , কত বড় আহাম্বকি হয়েছে, এটা যারা ডিপ্লোম্যাসি বোঝে, তারা স্বীকার করবেন। তারপরে বিএনপির নেতা ভারতে পাচার হয়, সাঈদির সাক্ষি ভারতে পাচার হয়। দেখেন প্রত্যেকটা ব্যাবহারেই কলকব্জা নষ্ট হয়, জীর্ন হয়, পুরোনো হয়। সবকিছুর বৈজ্ঞানীক উপায়ে শেষ আছে।

তবে আপনি আমি হুদাই চিল্লাই । এইযে ত্রিশ লাখ, স্বাধীনতা, রাজাকার , মহান মুক্তিযুদ্ধ , সম্মান, এগুলো যে যেটা জানে সেভাবে মানার বিষয় । পড়াশোনা করে জানার বিষয়। যাকে ঘৃনা করার করতে হয়, যাকে সম্মান করার করতে হয়। এই যে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এক একখান বিষয় নিয়ে গেল গেল রব তোলে, এসবে কান দিয়েন না। একটা বিষয়ে আপনাদের লাভ আছে। সরাসরি ভোট দিয়ে পছন্দের মানুষ বসানোর মত পরিবেশ তৈরি হয় কিনা দেখেন । অন্তত ৫ টা বছর পর পর আমাদের সামনে এসে ভোটটা চাইতে হলেও দলগুলো যাতে মাথা নত করে , সেটুকু পরিবেশ বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য ।

বাংলাদেশী রাজনীতি সংবাদ

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com