কে হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী?

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৯ | ২:০৫ অপরাহ্ণ | 377 বার

কে হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী?
স্কট মরিসন ও বিল শর্টেন। ছবি: এএফপি

শেষ সময়ের অপেক্ষায় দিন গুনছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় অঙ্গন। ১৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশটির ৪৬তম জাতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক নাটকীয়তার অবসান ঘটবে দিনটিতে। জনগণের ভোটে গঠিত হবে তিন বছর মেয়াদের নতুন সরকার। অস্ট্রেলিয়া পাবে দেশটির ৩১তম প্রধানমন্ত্রী।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে লড়াই এখন তুঙ্গে। লিবারেল ও ন্যাশনাল পার্টির জোট সরকার গত দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। অন্যদিকে নির্বাচন –পূর্ববর্তী জরিপে সমর্থকের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। দলীয় কোন্দলের জের ধরে লিবারেলের নেতা স্কট মরিসন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে কোন্দল ছাড়াই লেবারের প্রধান বিল শর্টেন।

১৯৮৩ থেকে ১৯৯৬ সালের টানা পাঁচবারের লেবার শাসনের উদাহরণ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, এক সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচন জেতেনি। এদিক থেকে নতুন সরকার গঠনে লেবার পার্টির সম্ভাবনা প্রবল। অন্যদিকে, গত কয়েক মাসের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা, ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার পক্ষে। হঠাৎই জনপ্রিয়তা বেড়েছে লিবারেল পার্টির। দুই দলের নির্বাচনী ইশতেহারের দিকে আলোকপাত করলে বিষয়টি বোঝা যায়। সরকার দল লিবারেল পার্টির করনীতি জনগণকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। সাধারণ মানুষের কাছে কর লাঘবের লিবারেল পরিকল্পনা উত্তম বলে মনে হচ্ছে।

অন্যদিকে লেবার পার্টির প্রতি জনগণের সমর্থন বেশি। ১০ থেকে ১২ মে পর্যন্ত মতামত গ্রহণের একটি প্রতিবেদনে যখন জনগণকে একটি দলকে সরকার হিসেবে বাছাই করতে বলা হয়। সে ফলাফলে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে যায় লেবার পার্টি। আবার অন্য প্রভাবশালী নির্বাচনী পুলে এগিয়ে জোট সরকারের দল লিবারেল পার্টি। ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ মতামত আসে লিবারেলের পক্ষে। লেবারের পক্ষে আসে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ মতামত। আগে চিত্র যা-ই থাকুক, বর্তমানে দুই দলের শক্তপোক্ত আর সমানে সমান অবস্থান কঠিন করে তুলেছে নির্বাচনের ফলাফলের আভাস। কে হতে চলেছেন অস্ট্রেলিয়ার আগামী প্রধানমন্ত্রী—এমন প্রশ্নের জবাব অনুমান করা এখন অনেকটাই কঠিন।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণের কর প্রদানের নীতিমালা একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে কত টাকা কর দেবে—এর ওপর ভিত্তি করে বদলে যেতে পারে কোন দল সরকার গঠন করবে। দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও ‘ফ্র্যাঙ্কিং ক্রেডিট, নেগেটিভ গিয়ারিং ও কর লাঘব’ বিষয়গুলো নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে অবসর গ্রহণকারীদের ট্যাক্স প্রদান প্রসঙ্গে। অবসরপ্রাপ্ত অনেক অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক কোনো ব্যবসার অংশীদার হিসেবে অর্থ পান। ব্যবসার প্রদানকৃত করের অংশ থেকেও অর্থ পান অবসরপ্রাপ্তরা, যাকে বলে ফ্র্যাঙ্কিং ক্রেডিট। এদিকে তাঁদের কোনো কর প্রদান করতে হয় না। ফলে সরকার তাঁদের উল্টো কর ফেরত দেয়। বিরোধী দল লেবার পার্টি এই নীতি বাতিল করতে চায়। আর সরকার দল সম্পূর্ণ লেবারের বিরুদ্ধে।

এরপর আসে নেগেটিভ গিয়ারিং। এটি মূলত যাঁরা বসতবাড়ি বা জমিতে বিনিয়োগ করেন তাঁদের জন্য। কেউ বাড়ি বা জমি ভাড়া দিয়ে আয় করলে তা যদি লোকসানের সম্মুখীন হয়, তবে ভাড়া আয় এর ওপর আসা কর অন্যান্য আয়ের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায়। যেমন কেউ বেতন থেকে পায় ১০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়ায় লোকসান হয়েছে ১ হাজার টাকা, তবে তাকে কর দিতে হবে ৯ হাজার টাকার ওপর। লেবার পার্টি এই নেগেটিভ গিয়ারিং করপদ্ধতি তুলে দিতে চায় বলে একটি প্রচার রয়েছে। আর লেবারের প্রচারিত এই নীতিমালার বিপক্ষ নিয়েছে লিবারেল পার্টি । পরবর্তী কর হ্রাসের বিষয়েও লেবারের পরিকল্পনায় নাখোশ বেশির ভাগ অস্ট্রেলিয়ান। ২৫ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলারের আয়ের জন্য লিবারেল কর পরিকল্পনা ২৫৫ ডলার। অন্যদিকে, একই আয়ের জন্য লেবার সরকারকে কর দিতে হবে ৩৫০ ডলার। ৮০ হাজার ডলার থেকে ওপরের সকল আয়ের জন্য লিবারেল ও লেবারের পরিকল্পনা একই। তবে লিবারেল দাবি করছে আগামী ৪ বছরের মধ্যে এই পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হবে, যেখানে লেবার আজীবন একই নীতিতে অটল থাকার কথা জানিয়েছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, সব মিলিয়ে জনগণের মনে সাম্প্রতিক দিনে লিবারেলের প্রতি সমর্থন বাড়ছে। লেবার ক্ষমতায় এলে বেশি কর প্রধান করতে হতে পারে—এমন শঙ্কা অনেকের ভাবনায়। তবে শঙ্কাটি যে অমূলক সেটি লেবার পার্টি গাণিতিক ও যৌক্তিকভাবে পরিষ্কার করতে পারেনি।

এদিকে শুরুতেই লেবারের নির্বাচনে জেতার প্রধান সম্ভাবনা দেশটির রাজনৈতিক পরিক্রমার কারণে। ১৯০১ সাল থেকে গঠিত অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদের ইতিহাসে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কোনো দল টানা দুবারের বেশি নির্বাচনে জয়লাভ করেনি। ব্যক্তিক্রম ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল। এই ১৩ বছর টানা ক্ষমতায় ছিল লেবার পার্টি। এর মধ্যে প্রথম চার বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বব হক। তিনিই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বেশি মেয়াদে থাকা প্রধানমন্ত্রী। এরপর ১৯৯৩ সালে পল কেটিং এর নেতৃত্বে লেবার পার্টি ক্ষমতায় এসে থাকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। জনপ্রিয়তার দিক থেকে বর্তমান লেবার প্রধান বিল শর্টেন এগিয়ে আছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের চেয়ে।

একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির দিকে নজর দিলে দেখা যায়, লিবারেল করনীতি সাময়িক সুবিধা প্রদান করলেও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন। লিবারেলের করনীতিতে আগামী ১০ বছরে সরকারের খরচা হবে প্রায় ১৫৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, লেবারের করনীতি সরকারের একই সময়ে ১৫৪ বিলিয়ন ডলার বাঁচিয়ে দেবে। এ ছাড়া লেবারের নির্বাচনী ইশতেহারে চিকিৎসা, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, বসতবাড়ি, শিল্পকারখানা, শিশু বিকাশ, সাংবিধানিক নতুনত্বসহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নানা উন্নয়নের দিকে জোড় দেওয়া হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে জনগণ। কেননা, নির্বাচনের আগে করা প্রতিজ্ঞা পালনে ব্যর্থ সরকারকে পরবর্তী নির্বাচনে কখনোই ভোট দিতে চায় না জনগণ। ফলে, দেশটির রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের আগে খুবই সতর্ক এবং সচেষ্ট থাকে। এ ছাড়া অভিবাসন খ্যাত দেশ অস্ট্রেলিয়ায় লেবার দলের একটা সুনাম রয়েছে অভিবাসনবান্ধব হিসেবে। বলা হয়, লেবারের আমলে অভিবাসীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পায়। লিবারেল সরকারের সময়ে যেখানে দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় কর্ম ভিসা ৪৫৭ বাতিল করে নতুন ভিসা চালু করা হয়। এ ছাড়া দেশটির অভিবাসীরা নাগরিকত্ব গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ইংরেজি দক্ষতা থাকার বাধ্যবাধকতা চালু করার চেষ্টা করে।

সবদিক মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় অঙ্গনে অনেক দলের মাঝে প্রধান দুই দলের কোন দলের জয় হবে, তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণায় দেওয়া যাচ্ছে না নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগেও। দুই দলের কট্টর সমর্থক ছাড়া অন্যান্য নাগরিকের মধ্যেও রয়েছে ‘কোন দলে ভোট দেব’ সংশয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনের আগে বাকি এই দুদিনের মধ্যেই প্রায় বেশির ভাগ ভোটাররাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন। যদিও জয়লাভে লেবার পার্টির সম্ভাবনা অনেকাংশে বেশি তবুও নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ কয়েক দিনে ফলাফলের মোড় ঘুরে যেতে পারে বিভিন্ন নাটকীয়তায়। তাই আপাতত কোন দল আসবে ক্ষমতায়, নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১৮ মে নির্বাচন পর্যন্ত।

সূত্র: প্রথম আলো

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com