অভ্যাস বদলে বাঁচার চেষ্টা বাবুই পাখিদের

বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯ | ১০:৫০ অপরাহ্ণ | 376 বার

অভ্যাস বদলে বাঁচার চেষ্টা বাবুই পাখিদের

বাবুই পাখি, যে পাখিটির বাসা তৈরীর কলা-কৌশল অন্যান্য পাখির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সচরাচর উঁচু তাল গাছে তারা বাসা বাঁধে, যাতে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে। এই পাখিটির বাসা নির্মাণশৈলী সবার নজর কাড়ে। এক সময় গ্রাম-গঞ্জে তাল গাছে শত শত বাবুই পাখির বাসা দেখা গেলেও এখন সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। বর্তমানে গ্রাম-গঞ্জে তাল গাছ নেই বললেই চলে। তাল গাছ হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাবুই পাখিও হারিয়ে যেতে বসেছে।

বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখির প্রথম পছন্দ তাল গাছ। এরপর নারিকেল বা সুপারি গাছ। এই সব গাছের পাতার সাথে অন্য লতাপাতা মিশিয়ে সে বাসা গড়ে। উপরে বাসা বানানোর কারণে সে নিরাপদে থাকতে পারে। তাল গাছ বা নারিকেল গাছের এত উপরে থাকে সেখানে সাধারণত অন্য কোন কিছুর নাগালের বাইরে থাকে।

সেই বাবুই পাখি ২০-২৫ বছরের ব্যবধানে চরম গৃহসংকটে পড়েছে। এতটাই সংকটে যে তাদের চিরচেনা অভ্যাস বদলে বাধ্য হয়ে কলা গাছ বা বিভিন্ন ঝোপে বাসা বানাচ্ছে। বাবুই পাখি প্রজননের এই সময়টায় পরেছে মহাবিপদে। কলা গাছের মত নিচু গাছে ঝুঁকি আছে জেনেও বাসা তৈরি করছে। এই বাসায় বাচ্চারা ঢিল মেরে তাদের ডিম নষ্ট করে দিচ্ছে সহজেই তবুও এই নিচু জায়গা ছাড়া আর তাদের উপায় নেই।

মানুষের হিংস্র থাবার কাছে হার মেনেছে বাবুই পাখির জীবনের মায়া। এমন কিছু বাসার ছবি কেরানীগঞ্জের কিছু এলাকায় দেখতে পান বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য এম. এ তাহের।

তিনি জানান, আমাদের অতি লোভে আমরা তাল গাছ কেটে অন্য গাছ লাগাচ্ছি। তার উপর কিছু কুসংস্কার আছে। গ্রামের মানুষ মনে করে তাল গাছে ভূত বাসা বাঁধে। আর সে ধারণা থেকেই তাল গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বাবুইপাখি আমাদের দেখিয়ে দিল আমরা মানুষ কতটা নিকৃষ্ট। জ্ঞানের অভাবে টাকার লোভে প্রকৃতি ধ্বংস করে চলেছি উন্নয়নের প্রতিযোগী হয়ে। তাদের এই অবস্থা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, কি করছি আমরা তাদের সাথে!

নির্লজ্জের মত মাথা নিচু করে রইলাম। এতটা পাষাণ আমরা কি করে হলাম? একটি গাছ কেটে কয়টি গাছ লাগিয়েছি আমরা তা কী ভেবে দেখেছি কখনো?

আমি প্রথম দেখলাম কলা গাছের ডালে এবং কাশবনে বাসা বানাতে আর কেউ দেখেছে কি-না আমার জানা নাই। ধীরে ধীরে কতটা মহাবিপন্নের কাতারে চলে যাচ্ছে এই বাবুইপাখি। প্রকৃতি না বাঁচলে মানুষ কীভাবে বাঁচবে? ভাবছে কি মানুষ?

এ বিষয়ে পাখিবিদ এস আই সোহেল বলেন, এই পাখির বাংলা নাম- দেশি বাবুই, ইংরেজি নাম- Baya Weaver, বৈজ্ঞানিক নাম- Ploceus philippinus।

সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। একটি পুরুষ পাখির একাধিক বাসা ও পরিবার থাকতে পারে। এরা সাধারণত ২ থেকে ৪টি ডিম দেয়। ডিম ফোটে ছানা বের হতে ১৪ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। মেয়ে পাখি একা ডিমে তা দেয়।

একটি ছানা ১৪ থেকে ১৬ দিনে নিজের মত চলার সক্ষমতা অর্জন করে বাসা ছেড়ে দেয়। বাবুই পাখিদের খাদ্য তালিকায় আছে ঘাস-বীজ, খাদ্যশস্য ও পোকামাকড়।

তিনি আরও জানান, বাবুই পাখি তাল, নারকেল, সুপারি, খেজুর ও বাবলা গাছে বাসা করে থাকে। তবে বাসার জন্য সব চেয়ে বেশী পছন্দ করে তাল গাছ। কিন্তু প্রকৃতি উজাড় করে তাল গাছ কেটে তাদের আবাসন আমরা ইতিমধ্যে নষ্ট করে ফেলেছি। কতটা নির্মম পরিস্থিতিতে তারা কলা গাছ বা কাশবনে বাসা বানাতে পারে? এর থেকে প্রমাণ হয় যে আমরা কিভাবে ধ্বংস করছি প্রকৃতিকে।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com