অসাম্প্রদায়িক ও সফল প্রদেশ ‌কেরালা!

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২০ | ৭:১৩ অপরাহ্ণ | 288 বার

অসাম্প্রদায়িক ও সফল প্রদেশ ‌কেরালা!

জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রাধান্য থাকতে হবে সবার আগে। আপনি যখন একটি রাজ্যের জনগণকে শিক্ষা ও চিকিৎসায় সমৃদ্ধ রাখতে পারবেন তখন সেই রাজ্যের সাফল্য আর কেউ আটকাতে পারবে না। কেরালা একটি অসাম্প্রদায়িক রাজ্য আর তাই এখানে সফলতাও অনেক বেশি।

২০১৫ সালের গ্রীষ্মের শেষের দিকের কথা। এক ব্যক্তি সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল কোচিতে যাচ্ছিলেন। প্রচণ্ড গরম থাকার কারণে তিনি রাস্তার মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন। লোকটি ছিল খ্রিষ্টান। সেই রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া আর একজন ভদ্রলোক অসুস্থ লোকটিকে নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন। তিনি ছিলেন হিন্দু। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় তার হৃদরোগে সমস্যা। আর এর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হবে।

এ কথা জনসম্মুখে আসার পর একজন মুসলিম ব্যবসায়ি নিজ উদ্যেগে তার চিকিৎসার জন্য একটি তহবিল গঠন করে যেখানে তার চিকিৎসার জন্য প্রচুর পরিমান অর্থ জমা হতে থাকে। রাজ্যের সেরা হার্ট সার্জন হলেন একজন খ্রীষ্টান ব্যক্তি। আর জানলে অবাক হবেন যে, সেই সার্জনের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্যের মন্ত্রী তার নিজ যাত্রা বাতিল করে ভারতীয় নৌ হেলিকপ্টার এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য। পরে তাকে ত্রিভুবনেত্তপুরম থেকে কোচি নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনাই বর্তমান কেরালা রাজ্যের দৃষ্টান্ত। তবে এখানেই শেষ নয়।

দু’বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে অকূল পাথারে পড়েছিলেন কেরালার এক নারী। তার নাম বিন্দু অশোক। তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে দিন কেটে যাচ্ছিলো কোনমতে ঠিকই, কিন্তু মেয়ে অঞ্জুর বিয়ে দেওয়ার মতো টাকার ব্যবস্থা করে উঠতে পারছিলেন না তিনি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন প্রতিবেশী নিজামউদ্দিন আলুমুত্তিল। তিনিই বিন্দুকে জামাত কমিটিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মসজিদ কর্তৃপক্ষ কি হিন্দু মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করতে রাজি হবেন?

মনে এই দ্বিধা নিয়েই জামাত কমিটির দ্বারস্থ হন বিন্দু। কিন্তু সেখানে মেলে অভাবনীয় প্রতিক্রিয়া। জামাতের একজন সদস্য বিয়ের খরচের দায়িত্ব নেন। কিন্তু অভ্যাগতদের তো খালি মুখে ফেরানো যায় না, তাই শুরু হয় প্রীতিভোজের ব্যবস্থাপনা। জুম্মাবারের নমাজে যোগ দিতে আসা মুসলিমদের জানানো হয় বিয়ের বিষয়টি। আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে রাজি হন অনেকেই। আর তাতেই ঘটে যায় বিরল এ ঘটনা।

গত ১৯ই জানুয়ারি রবিবার, কেরালার চেরুভাল্লির মুসলিম জামাত মসজিদ পরিণত হয় মানবতার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মসজিদ চত্বরেই টাঙানো হয়েছিল চাঁদোয়া। তার নীচে মালা বদল থেকে শুরু করে সব হিন্দু আচার-আচরণ মেনে বিয়ের অনুষ্ঠান চলে। আর তারপর প্রীতিভোজ। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে হাজার খানেক আমন্ত্রিত অতিথি খান তৃপ্তিভরে, দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেন নবদম্পতিকে। মসজিদ কমিটির এই সাহায্যে অভিভূত নবদম্পতি। শুধু বিয়ের আয়োজন করা নয়, নববধূকে ১০ তোলা স্বর্ণ এবং দু’লক্ষ রুপি উপহার দিয়েছে মসজিদ কমিটি।

এদিকে অঞ্জু-শরতের বিয়ের ছবি টুইটারে পোস্ট করেন কেরালার বামপন্থী মূখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সাথে তিনি লিখেছেন, এটি কেরালার সম্প্রীতির একটি উদাহরণ। প্রসঙ্গত, কেরালাই ভারতের প্রথম রাজ্য যারা সে দেশের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেছে এবং তারা বলছে এই আইন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) মুসলিম বিরোধী বলে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে কেরালা। সিএএ-বিরোধী প্রস্তাব পাশ হয়েছে কেরালা বিধানসভায়। সেই রাজ্যের সম্প্রীতির এমন নজির তুলে ধরার সুযোগ ছাড়তে চাননি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে কেরালা রাজ্য সরকার। তারা বলেছে, জনসমীক্ষা হতে পারে। কিন্তু এনপিআর নয়। কারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। যতোক্ষণ না এটা পরিষ্কার হচ্ছে, ততোক্ষণ তা প্রয়োগ করা যাবে না।

ধর্মীয় বৈষম্য সৃষ্টি করা আইনকে কোনোভাবে সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি বলেন, ‘কেরালার কাউকে এই আইন নিয়ে শঙ্কিত হতে হবে না। মানুষকে বিভাজিত করে সৃষ্ট এই আইন আমরা কোনোভাবেই রাজ্যে প্রয়োগ করবো না। ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার কারণে বিপুলসংখ্যক মুসলিম ভারতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। সেটিকে এখন হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা করছে বিজেপি।’

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে কেরালা বিধানসভায় প্রস্তাব পাস হয়েছে ইতিমধ্যেই। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়ন আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, তার সরকার কেরালা রাজ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) কার্যকর করবে না।

বিজয়ন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত তার সংকীর্ণ ও বৈষম্যমূলক মনোভাব ত্যাগ করা এবং সবার সাথে সমান আচরণ করা। এই আইন সংবিধানের মৌলিক মূল্যবোধ এবং নীতিমালার বিরোধী। দেশের জনগণের মধ্যে উদ্বেগের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সিএএ প্রত্যাহার এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।’ কেরালায় কোনো ডিটেনশন কেন্দ্র তৈরি করা হবে না বলেও বিজয়ন সাফ জানান।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেরালার ধর্মনিরপেক্ষতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। গ্রীক, রোমান, আরব প্রত্যেকেই আমাদের ভূমিতে পৌঁছেছিল। খ্রিস্টান ও মুসলিমরা অনেক আগেই কেরালায় পৌঁছেছিলো। আমাদের ঐতিহ্য হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক। বিধানসভায় আমাদের সেই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

দক্ষিণ ভারতের ছোট্ট রাজ্য কেরালার আয়তন ৩৮ হাজার ৮৬৩ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৩ কোটি ৩৪ লাখ। রাজ্যটি বিশ্বকে ‘উন্নয়নের কেরালা মডেল’ উপহার দিয়েছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মোতাবেক ২০১৮ সালে কেরালার মাথাপিছু জিডিপি ছিল ২ হাজার ৪০০ ডলার, যা ভারতের গড় মাথাপিছু জিডিপি ১ হাজার ৯৮৩ ডলারের চেয়ে সামান্য বেশি। ক্রয়ক্ষমতার সাম্যের (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি বা পিপিপি) ভিত্তিতে কেরালার মাথাপিছু জিডিপি ২০১৮ সালে ৯ হাজার ২০০ পিপিপি ডলার।

কিন্তু মানব উন্নয়ন সূচকের (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স—এইচডিআই) স্কোরে কেরালা ভারতের সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ১৯৯০ সাল থেকেই। সর্বশেষ ২০১৮ সালে কেরালার এইচডিআই সূচক ০.৭৮৪ ভারতের এইচডিআই সূচক ০.৬৪–এর তুলনায় এত বেশি যে সেটাকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ের বলে বিবেচনা করা হয়।

শিশুমৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার, জন্মহার, মৃত্যুহার, মোট প্রজননহার, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হার, সব পর্যায়ের শিক্ষিতের হার, মৌল স্বাস্থ্যসেবায় অভিগম্যতা, ভর্তুকি দামে খাদ্য-রেশন ও ফিডিং ব্যবস্থা, চিকিৎসক ও জনসংখ্যার অনুপাত—এ ধরনের সব সামাজিক সূচকেও কেরালা অনেক উন্নত দেশকে ছাড়িয়ে গেছে।

২০১০ সালে লন্ডনের খ্যাতিমান প্রকাশনা সংস্থা পিয়ারসন থেকে প্রকাশিত আমার ও নিতাই নাগের রচিত গবেষণা পুস্তক ইকোনমিক ইন্টিগ্রেশন ইন সাউথ এশিয়া: ইস্যুজ অ্যান্ড পাথওয়েজ–এ নিচের পরিবর্তনগুলোকে কেরালা মডেলের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে: ১. কার্যকর ও কম দুর্নীতিপূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা ও ফিডিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভর্তুকি দামে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর মধ্যে চাল বিতরণ, ২. খেতমজুরদের কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা বিধান এবং নিম্নতম মজুরি আইন বাস্তবায়ন, ৩. অবসরপ্রাপ্ত।

বর্ষীয়ান কৃষিশ্রমিকদের জন্য পেনশন চালু, ৪. দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য বর্ধিত সরকারি চাকরি, ৫. বর্গাদারদের ভূমিস্বত্বের নিরাপত্তা জোরদারকরণ এবং জবরদস্তিমূলক উচ্ছেদের আশঙ্কা নিরসন, ৬. গ্রামীণ ভিটেমাটিতে বসবাসরতদের দখলি স্বত্ব প্রদান, ৭. ভূমিহীন পরিবারগুলোকে বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য প্লট প্রদান, ৮. কৃষিশ্রমিকদের দৈনিক সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং তাঁদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা স্কিম চালু, ৯. গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসুবিধা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল নেটওয়ার্কের ব্যাপক সম্প্রসারণ এবং ১০. অনুপস্থিত ভূমিমালিকানা উত্সাদন।

কেরালার জনগণ প্রায় শতভাগ শিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে প্রবল সচেতন, তারা সংগঠিত হয়ে রাজনীতিবিদ ও আমলাদের সার্বক্ষণিক সজাগ ভূমিকা পালনে বাধ্য করে চলেছে। নির্বাচনে মাঝেমধ্যে বামপন্থীরা হেরে গেলেও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সার্বক্ষণিক মনিটরিং কয়েকবার নির্বাচনে জয়ী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ সরকারগুলোকেও সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে বাধ্য করেছে। আরও চমকপ্রদ হলো, মধ্যপ্রাচ্যে উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ মানবপুঁজি রপ্তানির ক্ষেত্রে কেরালা ভারতে চ্যাম্পিয়ন। কেরালার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রবাসীদের ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অমর্ত্য সেনের ‘স্বাধীনতাই হলো উন্নয়ন’ (ডেভেলপমেন্ট অ্যাজ ফ্রিডম) তত্ত্বের ক্ল্যাসিক নজির কেরালা। কেরালার কৃষি সংস্কার, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, খাদ্যনিরাপত্তাব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা, তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের অংশগ্রহণমূলক সংগঠন ও রাজনৈতিক সচেতনতা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং প্রগতিশীল ও পরমতসহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাঙালি নোবল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের বিচারে উন্নয়নের সবচেয়ে অনুকরণীয় মডেল উপহার দিয়েছে বিশ্ববাসীকে।

কেরালা হলো ভারতের এমন একটি রাজ্য যেখানে কেউ দরিদ্র নয়। খুব বেশি ধনী না হলেও এখানে আর্থিক দিক দিয়ে সবার মাঝে সমতা আছে। কেরালাকে সে দেশের অধিবাসীরা ঈশ্বরের নিজের দেশও বলে থাকেন। আর ঈশ্বরের দেশে তো কোন ভোদাভেদ থাকতে পারে না এমনটিই মনে করেন তারা। কৃষিতে কেরালা রাজ্য বেশ সমৃদ্ধ। ষোলশ শতাব্দীর দিকে বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসে এই দেশে বাণিজ্য করতো। ইহুদি, খ্রিষ্টান, আরবরা বিভিন্ন সময় এই রাজ্যে এসে ব্যবসা করতো। তাদেরই বদৌলতে কেরালা আজ ব্যবসা বাণিজ্য সব দিক থেকে সমৃদ্ধ।

এই রাজ্যে ধর্মীয় দাঙ্গার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু হলেও মুসলমান এবং খ্রিষ্টনরাও সমান অধিকার পায়। কিন্তু যদি ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকানো হয় তাহলে দেখা যায় ধর্ম বৈষম্যতার কারণেই নানারকম দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। কেরালা রাজ্যের জনগণ তাদের মৌলিক অধিকারগুলো যথাযথ পাওয়ায় রাজ্যে শিক্ষিতের হার ৯৪ শতাংশ। এই রাজ্যে শিশু মৃত্যুর হার হাজারে মাত্র ১২ জন। আর এখানকার স্বাস্থ্যসেবাও অন্যান্য রাজ্য থেকেও বেশ উন্নত। গত বছরে কেরালা ভারতের প্রাথমিক শিক্ষার হার ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করেছে। কেরালা এমন একটি রাজ্য যেখানে শিক্ষার দিকে থেকে পুরুষের চেয়ে নারীরা এগিয়ে আছে। এখানে নারীদের ক্ষমতায়নও অনেক বেশি।

কেরালার ইতিহাস সে অঞ্চলের ব্যবসার সাথে জড়িত, যা কিছুদিন আগে পর্যন্ত মসলার ব্যবসা ঘিরেই আবর্তিত হতো। মসলার তটভূমি হিসেবে পরিচিত অতিথি সেবক কেরালায় সমগ্র পৃথিবী থেকেই ব্যবসায়ীরা আসত যেমন গ্রীক, রোমান আরব, চাইনিজ, পর্তুগিজ, ডাচ, ফরাসী, ব্রিটিশ। কোনো না কোনোভাবে তারা প্রত্যেকেই এখানে তাদের পদচিহ্ন রেখে গেছে এবং তা বাইরের পৃথিবীর সাথে আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে কেরালার নিজস্বতা তৈরিতে সাহায্য করেছে।

পশ্চিমে আরব সাগর, পূর্বে অত্যুচ্চ পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং পরস্পর যুক্ত ৪৪টা নদী সমন্বিত কেরালা অনন্য ভৌগলিক বৈশিষ্ট সম্পুর্ন একটি রাজ্য যা তাকে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম আকর্ষনীয় স্থানের মর্যাদা দিয়েছে। এক দীর্ঘ তটভূমি, মাঝে মাঝে শান্ত ও পরিস্কার বেলাভূমি, পান্নার রঙের ব্যাক ওয়াটারের প্রশান্ত বিস্তৃতি, মাতাল করা হিল স্টেশন, বিচিত্র ওয়াইল্ড লাইফ মাত্র কিছু বিস্ময় যা আপনার পা বাড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই চমৎকার গন্তব্যগুলিত একটির থেকে অন্যটি মোটরে মাত্র দুই ঘন্টার দুরত্বে রয়েছে যা কিনা আপনি পৃথিবীর আর কোথাও পাবেন না।

ভারতের সবেচেয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাজ্য কেরালা, দেশটিতে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাত শুরু হয় এখান থেকেই, ভারতের প্রথম মসজিদ-মন্দিরের উৎপত্তিও এখান থেকেই, আয়ুর্বেদসহ সবার্ধুনিক মেডিকেল চিকিৎসায় কেরালা ভারতের সেরা, নারী অধিকার এবং শিক্ষায় সর্বাধিক অগ্রগামী, বাকি রাজ্যের তুলনায় কেরালায় সবচেয়ে বেশি উৎসব পালন করা হয়, ভারতের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে সবচেয়ে কম দুর্নীতির হার কেরালা রাজ্যে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তালিকায় পৃথিবীর অন্যতম ভ্রমনযোগ্য স্থান হিসেবে রয়েছে কেরালার সুনাম রয়েছে। এ রাজ্যে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়। ভারতে প্রথম ডিজিটাল স্টেট হচ্ছে এই কেরালা। এক সমীক্ষণে বলা হয়েছে, ‘Kerala is the best state in India to live and die.’

কেরালা এমন এক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে যা শুধু অতীতকে শ্রদ্ধাই করে না একই সাথে বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের পথেও এগিয়ে চলে এবং কেরালা এর জন্য গর্ব অনুভব করে। একশো শতাংশ স্বাক্ষরতা, ভারতে সর্বনিম্ন শিশু মৃত্যুর হার এবং সর্বাপেক্ষা বেশী জীবন সীমার প্রত্যাশার হার মাত্র কিছু বিষয় যা নিয়ে কেরলবাসী সত্যিই গর্বিত।

কেরালা একটি অসাম্প্রদায়িক রাজ্য আর তাই এখানে সফলতাও অনেক বেশি। এই রাজ্যে জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রাধান্য সবার আগে। আর এটাই কেরালার সাফল্যের মূল রহস্য। আপনি যখন একটি রাজ্যের জনগণকে শিক্ষা ও চিকিৎসায় সমৃদ্ধ রাখতে পারবেন তখন সেই রাজ্যের সাফল্য আর কেউ আটকাতে পারবে না। আর এটাই কেরালা করে যাচ্ছে দক্ষতার সাথে।হানাহানি, যুদ্ধবিপর্যয় দেশগুলোর জন্য কেরালা একটি আদর্শ হতে পারে। যেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সংঘাতহীন ভাবে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com