আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস : পারিবারিক ভাঙন নয়, প্রয়োজন সুশৃঙ্খল ও সুদৃঢ় পরিবার

শনিবার, ১৭ মে ২০১৪ | ১:১৯ অপরাহ্ণ | 924 বার

আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস : পারিবারিক ভাঙন নয়, প্রয়োজন সুশৃঙ্খল ও সুদৃঢ় পরিবার

> সামাজিক জীবনের মৌলিক ভিত্তি পরিবার – সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না : পরিবারের
> কোনো একক রূপ কিবা কোনো সার্বজনীন সংজ্ঞা নেই । পরিবার একটি সার্বজনীন
> পদ্ধতি এবং সামাজিক জীবনের মৌলিক ভিত্তি। পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না।
> সারা বিশ্বে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত
> হয়। পরিবার হচ্ছে একজন মানুষের সর্বপ্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ।
> পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিধান, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও
> স্নেহ-মায়া-মমতার বন্ধনে একেকটি পরিবার যেন কতগুলো হৃদয়ের সমষ্টি, যেখানে
> আছে জীবনের প্রবাহ, আছে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালবাসা, আছে উষ্ণ-আবেগ,
> মিলে-মিলে থাকার প্রবল বাসনায় আছে নিরাপত্তা, সহনসীলতা এবং একে-অন্যকে
> গ্রহণ করার মানসিকতা। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এই পারিবারিক বন্ধনের
> প্রভাব-বলয় বিস্তৃত। নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কির মতে – পরিবার হল একটি
> গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান জন্ম দান ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র।
> সামনার ও কেলারের মতে- পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন-যা কমপক্ষে দুই
> পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সামাজিক,
> রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের গঠন ও
> বৈচিত্র্যপূর্ণ নানামুখী পরিবর্তন এবং বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির
> পরিবারের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়। গঠন ও কর্মে বিভিন্ন
> পরিবার বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের
> ভূমিকাও ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়।
> বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও সংস্কৃতিতে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। মৌলিক
> মানবাধিকার সংরক্ষণ, সমমর্যাদার নিশ্চয়তা এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে
> সমঅধিকার ও বৈষম্যহীন পরিবেশের মাধ্যমে সামাজিক অগ্রগতি সাধন ও জীবন মান
> উন্নয়নে পরিবার সমাজের সর্বনিম্ন স্তম্ভ ও মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
> পরিবার এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে ভবিষ্যত জীবনের পথ নির্দেশনা গড়ে
> উঠে। সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে পরিবারবদ্ধ হয়ে বসবাস
> করে আসছে। তাই সমাজ সৃষ্টিতে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
> পরিবারের মৌলিক কাজ অনেক, একদিকে জৈবিক অপরদিকে মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক,
> শিক্ষাদান ইত্যাদি। পরিবারের সব চাইতে বড় দায়িত্ব শিশুর সামাজিকীকরণ এবং
> সংস্কৃতির সংরক্ষণ। পরিবারের ধারা কেমন- কি ধরনের প্রথা-রীতিনীতি এসবের
> উপর ভিত্তি করে শিশুর মনোজগত প্রস্তুত হয় এবং পরিবারে-তার জীবনভঙ্গি গড়ে
> ওঠে। তাই শিশুর সুষ্ঠু পারিবারিক শিক্ষা শৈশব তথা শিশুর মনে যে ছাপ
> রাখে-তা ওর পরবর্তী জীবনে অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
> আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস- সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধনে বৈশ্বিক লক্ষ্য : ১৫ মে
> আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ
> পরিষদের গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ঘোষণা
> করা হয়। সাধারণ ভাবে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের বিষয়টি ব্যাপক জনপ্রিয় না
> হলেও সমাজের মৌলিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম। পারিবারিক
> বন্ধন টিকিয়ে রাখার মাধ্যমে সামাজিক অগ্রগতি ও জীবনমান উন্নয়নে পরিবারকে
> প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টিই পরিবার দিবস পালনের
> মুখ্য উদ্দেশ্য। শিল্প বিপ্লবের পর পশ্চিমাদের মধ্যে পরিবারের প্রতি
> অনাগ্রহ দেখা দেয়। আর এ অনীহার কারণে পরিবারিক বন্ধনে দেখা দেয়
> অস্থিতিশীলতা। বিবাহবিচ্ছেদসহ নানা সামাজিক সমস্যা বাড়তে থাকে, যার প্রধান
> শিকার হয় শিশুরা। অনেক শিশুই বাবার পরিচয় ছাড়া বড় হতে থাকে। এর
> পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৩ সালে পরিবার দিবস পালনের
> সিদ্ধান্ত নেয়।
> শিল্প বিপ্লবের পর সারা বিশ্বে পরিবারের বিরূপ পরিবর্তনের প্রতি জাতিসংঘ
> গভীর মনোযোগ অব্যাহত রাখছে। পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকা সমান হবে।
> অন্যান্য সদস্যদের অধিকার সমান হবে, তাদের মর্যাদা হবে যথাযোগ্য, জাতিসংঘ
> এমনটাই চায়। বিশ্বে বিদ্যমান উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য পরিবারের
> ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানবাধিকার, জনসংখ্যা এবং নারীর অগ্রগতি পরিবার
> দ্বারা প্রভাবিত। তাই রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নের জন্য পরিবারের ভূমিকা,
> দায়িত্ব এবং অধিকার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ মনে করে, মৌলিক মানবিক
> অধিকার, মানুষের মর্যাদা এবং ছোট-বড় জাতি ও স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সমান
> অধিকার ও ব্যাপকতর স্বাধিকারের মাধ্যমে সামাজিক অগ্রগতি সাধন ও জীবন মান
> উন্নয়নের জন্য, পরিবার হচ্ছে মৌলিক ভিত্তি – সমাজের সর্বনিম্ন ইউনিট,
> লক্ষ্য নির্ধারণের টার্গেট। তাই পারিবারিক বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে
> পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ়ীকরণ ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি খুবই
> গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯৫ সাল থেকে
> সমগ্র বিশ্বে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দিবসটি যথাযোগ্য
> মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।
> সময়ের বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পরিবার ব্যবস্থার পরিবর্তন : দেশ-কাল-সমাজ,
> ইতিহাস, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, কর্ম-পরিধি, দায়-দায়িত্ব এবং আচার-আচরণভেদে
> পরিবারের রূপ ভিন্ন হয়। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে পরিবারের কাঠামো এবং
> আকার-আয়তন পরিবর্তিত হয়। শিল্প বিপ্লব পরিবারের গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আনে।
> সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক ব্যবস্থা থেকে ক্রমশ
> ব্যক্তিকেন্দ্রিক গণতান্ত্রিক পরিবার-বা যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে একক বা
> নিউক্লিয়ার পরিবার গঠিত হতে থাকে। সমাজবিজ্ঞানী ফলসম এর মতে, পরিবারে
> স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন ও চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতা, অলাভজনক
> শিশুশ্রম ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার এবং এর সাথে যুক্ত
> আর্থিক অনটন, ব্যক্তিত্বের সংঘাত ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের উন্মেষ এই
> তিনটি অন্যতম কারনে দিনে দিনে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে একক পরিবার গঠিত
> হয়। পরিবার ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক শিক্ষা এবং আমাদের
> হাজার বছরের ঐতিহ্য।
> শিল্প বিপ্লব, শিল্পায়ন ও নগরায়ন ভেঙে দেয় জমিদারি রাজত্ব এবং পরিবর্তন
> আনে জীবন ও কর্মক্ষেত্রে। বহু লোক বিশেষ করে তরুণরা ক্ষেত-খামার ছেড়ে শহরে
> কারখানায় কাজ নেয়। তখন বিশাল পরিবারে শুরু হয় বিচ্ছিন্নতা। ক্রমে পুরুষ
> প্রধান পরিবারে প্রবেশ করে মহিলাদের কর্তৃত্ব। পরিবারে পরিবারে পুরুষ ও
> নারীর সমতার সম-অধিকারের হাওয়া বইতে শুরু করে। পুরুষদের শুধু আয় করা আর
> মহিলাদের শুধু ঘরের কাজ করার চর্চার অবসান ঘটতে থাকে ধীরে ধীরে। অনেক
> স্ত্রী ঘরের বাইরে এসে যোগ দেয় নানা কাজে, পক্ষান্তরে বহু স্বামী অংশগ্রহণ
> করে ঘরের কাজে।
> পরিবারের গঠন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ধারা বিশ্বের সব জায়গায়
> দৃশ্যমান ও অব্যাহত। এ পরিবর্তন এক এক অঞ্চলে এক এক রকম। অনেক দেশে
> ক্ষুদ্র অনু পরিবার আবার অনেক দেশে একান্নবর্তী পরিবারের গ্রহণযোগ্যতা
> বেশি। একক পিতামাতা এবং বহু বিয়েসম্পন্ন পরিবার-যুগলের একজনের মৃত্যু,
> তালাক, বিচ্ছেদ, একত্রে বসবাস না করার সিদ্ধান্তে অনু পরিবারের উদ্ভব।
> দুয়ের বেশি জেনারেশন, একাধিক যুগলের একত্রে বসবাসই একান্নবর্তী পরিবার।
> একান্নবর্তী পরিবারগুলো সময়ের প্রয়োজনেই ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে যাচ্ছে।
> পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পরিবারের নতুন গঠন, জীবনযাত্রার মানে এসেছে
> পরিবর্তন যাতে পরিবার আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে।
> সমাজের আশঙ্কাজনক অবক্ষয়ে সামাজিক ব্যাধির উত্তরোত্তর বৃদ্ধি : বিপ্লবের
> পর পশ্চিমাদের মধ্যে পরিবারের প্রতি অনাগ্রহ দেখা দেয়। পাশ্চাত্য সমাজ
> বস্তুবাদের রঙিন নেশায় বুঁদ হয়ে পরিবার প্রথাকে উপেক্ষা করেছে। পরিবারের
> প্রতি অনাগ্রহ অনীহার কারণে পরিবারিক বন্ধনে দেখা দেয় অস্থিতিশীলতা, বিবাহ
> বিচ্ছেদ সহ নানান সামাজিক সমস্যা বাড়তে থাকে যার প্রধান শিকার হয় শিশু।
> অনেক শিশুই বাবার পরিচয় ছাড়া বড় হতে থাকে। ফলে আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা
> বঞ্চিত তাদের বন্ধনহীন সমাজে শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী তথা আপামর জনতা অবৈধ
> যৌনাচারসহ নানাবিধ অন্যায়-অপকর্মে জড়িয়ে পরে। আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়
> যারজ সন্তানের হার, ডিএনএ টেস্ট করে সন্তানের পিতা সনাক্ত করতে হয়।
> সমাজ গঠনে পরিবারকে প্রাধান্য দিয়ে ইদানীং পাশ্চাত্যের প্রায় সব দেশেই
> পরিবার সম্পর্কে নতুন মূল্যবোধের জন্ম হয়েছে এবং পারিবারিক সংস্কারে অনেক
> দেশ মনোযোগী হচ্ছে, একই সাথে কতকগুলো সংশোধনমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
> কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের দেশে পারিবারিক বন্ধনে চিড় ধরেছে।
> বর্তমান সমাজের অবক্ষয়, সামাজিক ব্যাধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান
> সময়ের প্রেক্ষাপটে পরিবারকে কেন্দ্র করে কিন্তু অনেক সমস্যার সৃষ্টি
> হচ্ছে। ঘরে ঘরে জ্বলছে অশান্তির আগুন । পরিবারগুলোর অশান্তির প্রভাব
> প্রতিফলিত হচ্ছে সমাজে। ডিস, সিডি, ইন্টারনেট, মোবাইল, সাইবার-ক্যাফে
> ইত্যাদির মাধ্যমে পর্ণোছবি দেখা, ব্লাক মেইলিং, ইভটিজিং বেড়ে গেছে। অশালীন
> ড্রেস, রূপচর্চা, ফ্যাশন, ফ্রিমিক্সিং, যত্রতত্র আড্ডা, প্রেমালাপ, মাদক,
> পরকীয়া, যৌনাচার, সন্ত্রাসের সয়লাব সর্বত্র। এ সকল কাজে যে প্রচুর অর্থের
> প্রয়োজন হয় তা জোগাড় করতে গিয়ে পরিবারের সাথে বচসা, মনোমালিন্য,
> চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, কিডন্যাপ, খুন-খারাবী কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সন্তানদের
> অত্যাচারে অতিষ্ঠ অভিজাত পিতা-মাতা যেন জিম্মি হয়ে আছেন যুবক-যুবতী
> সন্তানের নিকট । সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনও যেন পিতামাতার মতই অসহায়।
> আর্থিক-নৈতিক-সামাজিক ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন
> সংশ্লিষ্ট অনেকে। সমাজের অবক্ষয়ের কারনে যুব সমাজের কল্যাণময় অবদান থেকে
> বঞ্চিত হচ্ছে ব্যক্তি থেকে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সকলে। এর নেতিবাচক পরিণতি
> হিসাবে পারিবারিক সহিংসতা, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস বা মাদকাসক্তির
> বিস্তৃতি ঘটছে। বস্তুতপক্ষে এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা – মূল্যবোধের
> অবক্ষয় পুরো সমাজকে এক চরম দুঃসময়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
> দেখা যায়, যে সকল পরিবার সন্তানের প্রতি উদাসীন, সন্তানের প্রতি সঠিক
> দায়িত্ব পালন করেন না, তাদের অধিকাংশের যুবক-যুবতী সন্তানেরা উচ্ছৃক্মখল
> অনৈতিক জীবন যাপন করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সমাজে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে
> চলে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ‘ধনী শ্রেণী’ ও ‘দরিদ্র বস্তিবাসী।’ এদের মাঝে
> ধর্ম, ইসলামী মূল্যবোধ, ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা, পারিবারিক বোঝাপড়া,
> পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ নেই বললেই চলে। ধনী শ্রেণী বৈধ-অবৈধ পন্থায়
> টাকা রোজগার এবং ভোগ বিলাসেই মত্ত থাকে বেশির ভাগ সময়। সন্তানের
> চাহিবামাত্র টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড়, দামি মোবাইল, গাড়ি ইত্যাদি কিনে দিয়েই
> খালাস। অন্ধস্নেহে সন্তানের কোন ভুলত্রুটি গার্ডিয়ানের চোখে ধরা পরে না।
> অভিভাবকগণ এসব ব্যাপারে আগের মত সিরিয়াস নন, তারা কেবল অর্থের পিছনে
> ছুটছেন। সন্তানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাই একমাত্র বা প্রধান
> উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, ধর্মকর্ম, নীতি-নৈতিকতা গৌন হয়ে গেছে। সন্তানদের সময়
> দেয়ার সময় নেই, সন্তানও তাই কথা শুনছে না। ছোট বড় সকলে তথাকথিত প্রগতি বা
> উন্নয়নের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেয়ায় সমাজ ব্যবস্থা দ্রুত নষ্ট ও দূষিত হয়ে
> যাচ্ছে। নূন আনতে পান্তা ফুরাবার মত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে
> অশিক্ষা-কুশিক্ষায় দরিদ্র শ্রেণীর সন্তানরা ব্যাঙের ছাতার মত বেড়ে ওঠে।
> সন্তান একটু বড় হলেই রোজগারে লাগিয়ে দেয় এরা। এই দুই শ্রেণী সাধারণত
> নিজেরাও ধর্মকর্ম করে না, সন্তানকেও খুব একটা শিখাবার প্রয়োজনবোধ করে না।
> ফলে স্বাভাবিকভাবে এই শ্রেণীর সন্তানদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বেশি থাকে।
> মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোই মোটামুটি সমাজের বিবেকবান বা
> সচেতন সমাজ বলা যায়। এসব পরিবারই সমাজের শান্তি-শৃক্মখলার ভারসাম্য ধরে
> রাখে। এ সকল পরিবারের অভিভাবকগণ সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অত্যন্ত
> আন্তরিকতা ও যত্নের সাথে ধর্ম-কর্ম, আদব-কায়দা, ভদ্রতা, শালীনতা,
> দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ নৈতিকতা ইত্যাদি শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তাই এ অংশে ফাটল
> ধরলে তা সত্যিই অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
> আদর্শ পারিবারিক বন্ধনে আমাদের করণীয় :
> পরিবার একজন মানুষের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ স্কুল। এখান থেকেই মানুষ প্রথম
> শিক্ষা পায়। পারিবারিক মর্যাদার মাধ্যমে সুনাগরিক হয়ে সকলকে সুনদর দেশ গড়ে
> তুলতে হয়। পারিবারিক বন্ধনের মাধ্যমে শক্তিশালী পরিবার, সমাজ ও সমৃদ্ধদেশ
> গড়ে ওঠে। পারিবারিক শিক্ষা হচ্ছে ছেলেমেয়েদের জন্য প্রথম বিদ্যাপিঠ।
> জীবনের শুরুতে পারিবারিক শিক্ষা ও পিতা মাতার আদর্শ নিয়ে ছেলে মেয়েদেরকে
> বড় হতে হয়। পারিবারিক ঐতিহ্য ও সুনাম ছেলে মেয়েদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
> তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় যেমন কিছু সংবিধান আছে তেমনি পারিবারিক
> সংবিধানও থাকা দরকার। যেমন পরিবারের সবার সাথে সদ্ভাব গড়ে তোলা, সাংসারিক
> শৃংখলা বজায় রাখা, মিথ্যে না বলা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা, নির্দিষ্ট সময়ে
> ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করা, মিথ্যেকে ঘৃণা করা এবং মানবিক
> মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে অন্তরকে বিকশিত করা।
> পারিবারিক কার্যাবলীতে সবার সচেষ্ট হতে হবে। ছেলে ও মেয়েকে স্বাধিকার,
> স্বাধীনতা ও সাম্যের প্রশ্নে বৈষম্যহীনভাবে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিকশিত
> হওয়ার সার্বিক সুযোগ দিতে হবে। সুখী পরিবার শুরু হয় ছেলেমেয়েদের থেকে।
> ছেলে ও মেয়ে উভয়ে যাতে সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠে সে ব্যাপারে
> পরিবারের প্রধান হিসাবে বাবা ও মাকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিশাসন বা অতি
> প্রশ্রয় দুটোই সন্তানের জন্য ক্ষতিকর-শাসনে-স্নেহে তাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে
> হবে যাতে সে দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে বড় হয়ে ওঠে।
> এক্ষেত্রে মাকেই পারিবারিক মূল্যবোধের আঙ্গিকে পারিবারিক জীবন দর্শন ও
> লক্ষ্য কাঠামো রচনা করতে হবে। যে মায়ের সাংগঠনিক ক্ষমতা আছে তিনি পারেন
> পরিবারকে আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে। তাই পরিবারে-সমাজে-রাষ্ট্রে
> নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয়
> দায়িত্ব। পৃথিবীর উন্নত-অনুন্নত সবদেশেই নারীর অবস্থান ও তার জীবনযাপনের
> চিত্রটি বড়ই মলিন। সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত ক্ষুদ্র একটি নারী সমাজ ভালো
> অবস্থায় থাকলেও বৃহত্তর নারীসমাজ এখনও অবহেলিত, নির্যাতিত এবং
> দারিদ্র্র-দু:খে জীবনযাপনে বাধ্য হয়ে আছে। পুরুষ তার শক্তি ও অর্থ আয়ের
> কারণে নিজেকে সুরক্ষিত, ভোগ-বিলাসী রাখতে সমর্থ হয়েছে। পরিবার সন্তান
> পরিত্যক্ত করে সে অন্যত্র চলে যেতে পারে। কিন্তু নারীর পক্ষে সেটা সম্ভব
> হয় না। নারী সন্তান ধারণ ও জন্মদান করে এবং লালন-পালন করে বলেই মানবসভ্যতা
> আজ উন্নত। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অপব্যাখ্যা, যৌন নিপীড়ন, যৌতুক, ধর্ষণ,
> সম্পত্তি থেকে বঞ্চনা, বহু বিবাহ, তালাক, ফতোয়া ইত্যাদির অভিশাপ থেকে
> নারীকে রক্ষা করতে হবে।
> ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
> পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবারের গঠন ও অন্যান্য অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে।
> মধ্যযুগে ইউরোপে রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং সামন্ততন্ত্র দ্বারা পরিবার
> প্রভাবিত হতো। এক্ষেত্রেও পুরুষদের প্রাধান্য ছিল এবং পরিবারের ব্যাপকতা।
> একই সময় মুসলিম পরিবারের অবস্থা ছিল তার উল্টো। এ সময় মুসলমান পরিবারে
> নিজস্ব সম্পদের প্রতি মহিলাদের কর্তৃত্ব ছিল।
> বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব পরিবারে শান্তি বিনষ্ট হয়, সেসব
> পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিকাশ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। তারা অপরাধ কিংবা
> সমাজবিরোধী কাজে বেশি সংখ্যায় জড়িত হয়ে পড়ে। তাই প্রতিটি শিশুকে শুরু
> থেকেই দিতে হবে তার বাসযোগ্য পরিবেশ। তাকে আদর-ভালোবাসার মধ্যে গড়ে তুলতে
> হবে। আনন্দময় শৈশব দিতে হবে। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, রাগ বা নিষ্ঠুরতা থেকে তাকে
> দূরে রাখতে হবে। আর তা তখনই সম্ভব, যখন পরিবারটি হবে সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ।
> পারিবারিক ভাঙন নয়, প্রয়োজন সুশৃঙ্খল ও সুদৃঢ় পরিবার :
> পরিবার কথাটি শুনলেই আমাদের বাঙালি মানসে যে ছবিটি ভেসে ওঠে, সেখানে থাকেন
> দাদা-দাদি, মা-বাবা, ভাইবোনসহ আরো অনেকে। একই সঙ্গে মা, বাবা, ভাই, বোন,
> সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসবাস করছে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ। একজনের সুখে
> অন্যজন সুখী হচ্ছে, একজনের দুঃখে কাঁদছে অন্যজন। নিবিড় বন্ধন যেন গড়ে
> উঠেছে পরিবারের মধ্যে। একে অপরকে নানাভাবে সাহায্য করে। এ বন্ধন আমাদের
> দেশে খুবই নিবিড়। শুধু বাঙালি নয়, অন্য অনেক জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেও পরিবারের
> রূপ প্রায় একই রকম। কিন্তু আধুনিক সমাজে পরিবারের সেই রূপটি ক্রমেই ক্ষয়ে
> যাচ্ছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে যৌথ পরিবার। <https://> বাড়ছে ছোট একক পরিবার
> কিংবা পরিবার-বিচ্ছিন্নতা। কখনো ইচ্ছা করে, কখনো কাজের প্রয়োজনে মানুষকে
> ছাড়তে হচ্ছে পরিবার, যা কোনো দিক থেকেই কাম্য নয়।
> সামাজিক ঐক্য ও পারস্পরিক নির্ভরতায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এগিয়ে যায়।
> আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের আলোকে সুষ্ঠু পারিবারিক ব্যবস্থার প্রয়োজন
> অপরিসীম। পারিবারিক বন্ধন হচ্ছে প্রথমত স্বামী ও স্ত্রীর এবং এর মাধ্যমে
> বিস্তৃতি ঘটে বিভিন্ন শাখা প্রশাখার। তাই প্রথমত প্রয়োজন স্বামী ও স্ত্রীর
> মধ্যে ভালবাসা, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমঝোতা, সহমর্মিতা এবং শ্রদ্ধাবোধ।
> পরিবার একজন মানুষের শান্তির আশ্রয়। পাখি যেমন নীড়ে ফেরে তেমনি আমরাও
> ভালবাসা ও স্নেহ মমতার আকর্ষণে ঘরে ফিরি। এর বিচ্যুতি ঘটলেই বিপর্যয় নেমে
> আসে। তাই সমাজের সার্বিক কল্যাণে ভালবাসা ও স্নেহ-শ্রদ্ধা ও সমঝোতার
> মাধ্যমে পরিবারকে একটি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন।
> কোনভাবেই পারিবারিক ভাঙন নয় বরং মূল্যবোধের আলোকে এটিকে আরো সুদৃঢ় করে গড়ে
> তুলতে হবে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ ধরনের দিবস পরিবারের সদস্যদের
> মধ্যে ভালোবাসা বাড়ায়। এক দিনের জন্য পরিবারের সদস্যদের এক করতে পারে।
> সামাজিক উন্নয়নে পরিবারের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। তাই এ বিষয়ে জনসচেতনতা
> সৃষ্টির জন্য বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে দিবসটি উদযাপন করা জরুরি।
>

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com