আমরা শুধু ‘মিষ্টি সোনা’ নই, রাস্তায় নেমে বলছেন লেবাননের মেয়েরা

বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৯ | ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ | 241 বার

আমরা শুধু ‘মিষ্টি সোনা’ নই, রাস্তায় নেমে বলছেন লেবাননের মেয়েরা

এই প্রথম স্বাধীনতা দিবসে দু’টি পৃথক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে লেবাননে। রাজধানী বৈরুতে প্রথামাফিক সরকারি সামরিক কুচকাওয়াজ ছিল। তবে তার চেয়ে অনেক বড় মিছিল করেছিলেন দেশের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা।

বৈরুতের ‘শহিদ স্কয়ার’র সেই মিছিলে শুক্রবার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। সামরিক কুচকাওয়াজের আদবকায়দা ছিল না সেই মিছিলে। শুধু ছিল মুষ্টিমেয় ‘ধনী ও অভিজাতের’ হাত থেকে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে মুক্ত করার ডাক।

এক লাফে আয়কর বিপুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৭ অক্টোবর থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে লেবাননে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই বিক্ষোভ অনেক বড় মাপের আন্দোলনের চেহারা নেয়। শুধু কর ব্যবস্থা নয়, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর ডাক দিয়েই পথে নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। যাদের মধ্যে একটা বড় অংশ কমবয়সী মেয়েরা। স্বাধীনতা দিবসের সমাবেশেও সামনের সারিতে ছিলেন দেশের তরুণীরাই।

এই বিক্ষোভরত মেয়েদের উদ্দেশে প্রতিবেশী সব রাষ্ট্র থেকে উড়ে আসতে শুরু করেছে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিক্ষোভরত তরুণীদের উদ্দেশে লাগাতার যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে।

এসব সংবাদমাধ্যমের মধ্যে একদম সামনের সারিতেই রয়েছে সৌদি আরবের কয়েকটি দৈনিক।লেবাননের মহিলা আন্দোলনকারীদের ছবি ছেপে সেসব দৈনিকের খবরের শিরোনাম ‘সব সুন্দরীরাই রাস্তায় নেমেছেন’ বা ‘শুধু সুন্দর নয়, বদমেজাজিও।’ ছবির ক্যাপশনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘মিষ্টি সোনা’, ‘নেকু-পুষু’ ইত্যাদি শব্দবন্ধ।

শুধু সংবাদমাধ্যমই নয়, পশ্চিম এশিয়ার ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করেন এমন বহু পুরুষই লেবাননের মেয়েদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ চালিয়ে যাচ্ছেন। মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ছেলে আলা মোবারক যেমন তাদের দেশে ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন, ‘তখন যদি এই সব সুন্দরী বিপ্লবে অংশ নিতেন, তা হলে আমি আর আমার ভাইও বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দিতাম!’

মিসরের ধনকুবের শিল্পপতি নাগিব সাওয়ারিসের মন্তব্য, ‘সব সময়ই টিভিতে লেবাননের বিক্ষোভ দেখছি। শুধু স্ত্রী ঘরে ঢুকলেই চট করে চ্যানেল পাল্টে দিই।’

সমাজতাত্ত্বিকেরা বলছেন, লেবাননের বিক্ষোভরত তরুণীদের এভাবে শুধু ‘মেয়ে’ তকমা দেয়ার মধ্যে দিয়ে এক দিকে যেমন আরব পুরুষের লিঙ্গবৈষম্যমূলক মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে, তেমনই বোঝা যাচ্ছে, লেবাননের মেয়েরা যেভাবে ‘স্বাধীনতা’ উপভোগ করেন, তা নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পশ্চিম এশিয়া।

হাজার হাজার মেয়ে রাস্তায় নামছেন, ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গলা ফাটাচ্ছেন, এটাই মেনে নিতে পারছেন না পশ্চিম এশিয়ার পুরুষ। সেই অস্বস্তি থেকেই আন্দোলনে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে মন্তব্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

তবে অন্যান্য দেশের তরুণীদের পাশে পেয়েছেন লেবাননের মেয়েরা। বৈরুতের বিক্ষোভকারীদের বার্তা দিয়ে মিসরের এক তরুণী টুইটে বলেছেন, ‘আমাদের দেশের ছেলেরা আপনাদের পোশাক দেখতে ব্যস্ত। আপনারা বিপ্লব চালিয়ে যান।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌদি এক নারীর মন্তব্য, ‘পর্ন ছবির বাইরে মেয়েদের কী রকম দেখতে, জানেই না সৌদি পুরুষ। আপনারা সেটাই তাদের দেখিয়ে দিলেন!’

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com