আমি ফকিন্নির পুত!!

শনিবার, ১৭ মে ২০১৪ | ১:৪২ অপরাহ্ণ | 868 বার

আমি ফকিন্নির পুত!!

 

প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলতাফ হোসাইন

Email: altaf_duet@yahoo.com

বড় অদ্ভুত আমাদের মন-মানষিকতা। দুঃখ কষ্ট আর অপমানে মনটা ভীষন খারাপ

হয়ে আছে। মোশাররফ করিম তুমি কি জান মানুষের সংঘা কি? তুমি কি জান কর্ম

কাহাকে বলে? কুলি, মুজুর, ঝাড়ুদার স্বল্প আয়ের ছোট ছোট কাজের স্বল্প

শিক্ষিত সহজ-সরল পারিশ্রামিক মানুষ গুলোকে কিভাবে তুমি “ফকিন্নির পুত” বলে

সম্বোধন করো? তুমি কি জান ওদের টাকায় সচল হয় দেশের অর্থনীতির চাকা,

আর তাতেই তোমার বেতন হয়? তুমি কয়েক ক্লাস পাস দিয়ে, দু-চারটা নাটক ফাটক

করে এক্কেবারে ” বড়লোকের পুত” হয়ে গেলে? অফিসের বড় কর্মকর্তা আর

মোটা বেতনের চাকুরী করলে মানুষ সৎ আর সম্মানের যোগ্য হয়ে যাবে, সেটা

তোমায় কে বললো? তুমি কি জান বিশ্ব নেতা, সর্ব কালের সর্ব শ্রেস্ঠ মহা-মানুষ

মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লেলাহু আলায়হে ওয়াসাল্লাম এর কাজ কি ছিলেন? তিঁনি

ছিলেন মেষের রাখাল। মোশাররফ করিম কান পেতে শুনুন শুধু উনি নন, এই বিশ্বে যত

রাসূল আল্লাহ সুবাহানাতাল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সবাই কে তিনি একবারের

জন্য হলেও বানিয়েছিলেন মেষের রাখাল। মোশাররফ করিম তুমি কাকে ঘৃনা করছ?

কাকে “ফকিন্নির পুত” বলছো, তোমার কাছে কি সেই সেন্স আছে? পৃথিবীর বড় বড়

মনীষি আর নেতাদের দিকে তাকিয়ে দেখ উনারা অনেকেই ছিলেন ফেরিওয়ালা, বস্তির

ছেলে কিংবা রাস্তার ঝাড়ুদার। তুমি যখন ঢাকা শহরে বৈধ-অবৈধ টাকায় কেনায়

অভিজাত ফ্ল্যাটে ঘুমিয়ে থাকো, আর আমি তখন তোমার চোখে “ফকিন্নির পুত”

সুবহে সাদিকের আগে ঘুম থেকে জেগে উঠি। আর মসজিদ পানে ছুটে চলি দু’রকাত

ফরয আদায়ের জন্য। তারপর কোন রকমে বাসী রুটি আর তরকারীর ঝোল দিয়ে

দুচারটা গিলে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে বেরিয়ে পড়ি রোজগারের উদ্দেশ্যে।

দিন শেষে ক্লান্ত অবসান্ত শরীলটা এলিয়ে দিয়ে সামান্য একটু বিনোদনের আশায়

টিভির সূইচ অন করতে তোমরা আমাকে “ফকিন্নির পুত”, ছোট লোক, ক্ষেত,মূর্খ

বলে কটাক্ষ করো, তুমি জানোনা মোশাররফ করিম আমার মনটা তখন কতটা

বেদনায় ভরে উঠে। প্রতিদিন মনের পর্দায় ভেসে উঠে আমার অবুঝ দুটি সোনামনির

মুখের ছবি। প্রতিটি ঈদে ওরা ভাবে এবার বুঝি নিশ্চয় আসবে ওদের আব্বু। অবুঝ

শিশুর দৃস্টি শূন্যে হারিয়ে যায় একসময়। বৃদ্ব মা তার একমাএ নাড়ি ছেঁড়া ধান কে

পায় না অন্তিম শষ্যায়। আর বাবাকে ধুঁকে ধুঁকে কাশি নিয়ে ও যেতে হয় নিত্য দিনের

কাজে। আর প্রিয়তমা বৌ এর কথা নাই বা বললাম। সে ডাগর চোখের কালো

চোখে এখন কালী পড়ে গেছে অব্যক্ত বেদনায়। এত কস্টের পর ও আমরা সুখে

আছি। কোনদিন কোন অভিযোগ করিনি। না সমাজের কাছে, না সরকারের কাছে।কিন্তু আজ তোমাদের ঐ বকা শুনে কিছুতেই নিজেকে শামলিয়ে রাখতে পারছি না ।

মোশাররফ করিম তুমি শুনে রাখ, তোমাদের নাটক পাড়ার মত আমাদের ভিডিও

কিল্প বের হয় না, সংসারে স্বামী -বৌ এর মধ্যে সব সময় ঝগড়া লেগে থেকে

না,আত্নহত্যা হয় না। আমরা স্বল্প আয়ের স্বল্প শিক্ষিত কুলি-মুজুর হয়ে ও মন

মানষিকতায় তোমাদের চেয়ে অনেক উঁচুতে আছি।

ভাবছি আমাদের সমাজটা কি সত্যিই ধ্বংস হয়ে গেল? বিবেকগুলো কি সব মরে

গেল? জাতি হিসাবে আমদের অস্তিত্ব টিকে থাকবে তো? এই সব মোশাররফ

করিম এর মত নাদান, মূর্খ, অশিক্ষিত, কুলাংগার যতদিন আমাদের সমাজে দর্পন

হিসাবে কাজ করবে ততদিন আমদের সমাজের অবক্ষয় চলতে থাকবে। আমরা

আমাদের রক্তের বিনিময়ে হালাল উপার্জন করি যা আমাদের কে অনেক তৃপ্তি দেয়।

প্রবাসীদের সাথে এমন আচরণ মূলক নাটক বা ফিল্ম কি করে সরকার প্রচারের

অনুমতি দেয় সেটা বোধগম্য নয়।

মোশাররফ করিম সহ নাটক রচিয়তা ও সংশ্লিস্টদের বোধ উদয় হউক,ওরা আবার

মানুষ হয়ে উঠুক, সমাজটা ভরে উঠুক সত্য আর সুন্দর দিয়ে এই কামনা থাকলো।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com