ইতালি থেকে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি!

সোমবার, ২৩ মার্চ ২০২০ | ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ | 223 বার

ইতালি থেকে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি!

গত এক মাসের টাইমলাইন নিয়ে একজন ইতালিয়ান তাদের দেশের করোনা আক্রমণের কিছু পর্যায় বলেছেন। আজ থেকে এক মাস পরে আমাদের অবস্থাও কি এমন হবে? আমরাও কি সেই একই ভুলগুলি করছি না?

হাসান মাহবুবঃ যেহেতু আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস “সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে” আছে, এবং স্থানীয় পর্যায়ে ভাইরাস না ছড়ালে ”কান্ট্রি লক ডাউন” এর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই, তাই আমরা আয়েশ করে দুর্গত দেশগুলির অবস্থা দেখতে পারি। রেডিটে একজন ইতালিয়ান তাদের দেশের করোনা আক্রমণের কিছু পর্যায় বলেছেন। সেগুলি এমন-

পর্যায় ১
করোনা ভাইরাসের প্রথম কেস ধরা পড়লো। এটা আর কী এমন! ফ্লু এর মত কিছু একটা। আর তাছাড়া আমার বয়স তো ৭৫+ না। ভয়ের কী আছে। সবাই অযথাই আতঙ্কিত হচ্ছে। ভয়ের কিছু নেই।

পর্যায় ২
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তে বাড়তে একটা বলার মত পর্যায়েই এসে গেছে। দুই একটা ছোট শহরকে রেড জোনে রাখা হয়েছে। যাক, তারা তাদের মত চিকিৎসা নিতে থাকুক, আমরা আমাদের মত ঘুরে বেড়াই। মিডিয়া অযথাই প্যানিক ছড়াচ্ছে। এদের কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই! আমাদের এলাকায় সবাই ভালো আছে। ভালোভাবেই খেয়ে-পরে-ঘুরে-ফিরে বেঁচে আছে। যাই, আমার এক বন্ধুর বাসায় পার্টি আছে আজ।

পর্যায় ৩
ঘটনা কী! হঠাৎ করে লাফিয়ে লাফিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কেন? কাল যা ছিলো, আজ তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে! দেশের এক চতুর্থাংশকেই বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। আক্রান্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও অফিস-আদালত-রেস্তোঁরা-বার খোলা আছে। দেশের বাকি অংশ অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই চলছে। এর মাঝে রেড জোনের দশ হাজার “বুদ্ধিমান মানুষ” তাদের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে স্বাধীনতা লাভের প্রবল আকাঙ্খায় দেশের অন্যান্য অংশে চলে গেলো।

যাবে না কেন? তাদের দেশের বাড়ি সেখানে। আত্মীয় স্বজনের সাথে থেকে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা দরকার। যদিও টিভিতে অনবরত বলা হচ্ছে ৫ জনের বেশি লোকের জমায়েত করা ঠিক না, বারবার হাত ধুতে হবে, হ্যান্ডশেক করা যাবে না, তবে মানুষজন আমলে নিচ্ছে না তেমন।

পর্যায় ৪
আক্রান্তের সংখ্যা ভয়ংকরভাবে বাড়তে শুরু করছে। সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালগুলিতে জায়গা নেই। পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের ডেকে আনা হচ্ছে অবস্থা সামাল দেয়ার জন্যে। এবং অবশ্যই, চিকিৎসকরাও আক্রান্ত হচ্ছে, তারাও তাদের পরিবারকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা ভয়ংকরভাবে বাড়ছে। এখন অবস্থাটা এমন, “যোগ্যতমরা টিকে থাকবে” এই নীতিতে বয়স্ক, এবং অধিক সংকটে জর্জরিত রোগীদেরকে চিকিৎসা না করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, একটু জোয়ান এবং স্বাস্থ্যবানদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

পর্যায় ৫
পুরো দেশকেই কোয়ারেনটিন করে রাখা হয়েছে। তবে দোকানপাট, ব্যবসাবাণিজ্য এখনও খোলাই আছে। সবকিছু বন্ধ করে দিলে অর্থনীতির ভেঙে পড়বে না? (ভেঙে পড়েছে ইতিমধ্যেই)। এক শহর থেকে আরেক শহরে বিশেষ কোন কারণ ছাড়া যাওয়া নিষিদ্ধ। এর মাঝেও কিছু মানুষ নিজেদের অমর ভাবছে। দল বেঁধে ঘোরাফেরা করছে। রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে।

পর্যায় ৬
মাত্র দুইদিন পরের ঘটনা। সব ধরণের ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সুপারমার্কেট, আর ফার্মেসি খোলা থাকবে। বাইরে বের হতে হলে বিশেষ সনদ লাগবে। সনদ দেখাতে না পারলে ২০০ ইউরো জরিমানা। আর যদি করোনা পজিটিভ অবস্থায় পাওয়া যায়, তাহলে ১২ বছরের জেল।

এই হলো ইতালির গত এক মাসের করোনা টাইমলাইন। আজ থেকে এক মাস পরে আমাদের অবস্থাও কি এমন হবে? আমরাও কি সেই একই ভুলগুলি করছি না?

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com