টয়লেট ক্লিনার থেকে এয়ারলাইন্সের মালিক হলেন বাংলাদেশি

সোমবার, ০৯ মার্চ ২০২০ | ৭:৫৫ অপরাহ্ণ | 223 বার

টয়লেট ক্লিনার থেকে এয়ারলাইন্সের মালিক হলেন বাংলাদেশি

এই মানুষটা স্বপ্ন দেখতেন বড় কিছু করার। সেই স্বপ্ন থেকেই এয়ালাইন্সের পরিস্কারকর্মী থেকে মালিক হয়েছেন। আমি খুব সম্ভবত একটি বই লিখবো। তার নাম হবে, ‘এয়ারলাইন ক্লিনার টু এয়ারলাইন ওউনার’।

বলছিলেন কাজী সাইফুর রহমান। টয়লেট ক্লিনার থেকে বনে গেছেন এয়ারলাইন্সের মালিক। যুক্তরাজ্যে গড়ে তুলেছেন বিশ্বের প্রথম হালাল এয়ারলাইন্স, উদ্যোক্তা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন সেখানকার মূলধারার গণমাধ্যমে। ২০১৭ সালে এই তরুণ বাংলাদেশী ভূষিত হন ব্রিটিশ মুসলিম এওয়ার্ডে।

বিদেশের মাটিতে কিভাবে এতো কিছু করলেন বাংলাদেশী এই উদ্যোক্তা? সিলেটের বাসিন্দা কাজী সাইফুর রহমান ১৩ বছর বয়সে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। স্কুলের গণ্ডি পেড়িয়েই চাকরী নেন এয়ারপোর্টে বিমানের টয়লেট ক্লিনার হিসেবে। আত্মপ্রত্যয়ী সাইফুর চাইতেন জীবনে বড় কিছু করতে। সেই তাগিদ সবসময়েওই ছিলো তার।

সেই লক্ষ্যে জমাতে থাকেন অর্থ। বাংলাদেশী টাকায় মাত্র ৭০ হাজার টাকা দিয়ে নেমে পড়েন আতর ব্যবসায়। ছোট্ট সেই আতরের দোকান থেকেই লন্ডন শহরে গড়ে তোলেন বিশাল এক পারফিউম শপ। কিন্তু তখনো তিনি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে যোজন যোজন মেইল দূরে।

এয়ারপোর্টে টয়লেট ক্লিনার হিসেবে কাজ করতে করতে উড়োজাহাজ দেখলেই তার ইচ্ছে হতো এর মালিক হওয়ার। প্র্যাক্সটিসিং মুসলিম হওয়ায় বিদেশের মাটিতে হালাল খাবার নিয়ে পড়তে হতো নানান সমস্যায়। চাইতেন এমন একটি এয়ারলাইন্সের মালিক হতে যেটা চলবে ইসলামিক অনুশাসন মেনে।

তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি আগাতে থাকেন একটু একটু করেই। কথায় আছে- ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল। তাই পরিকল্পনা করতে থাকেন তার মতো করে একটি এয়ারলাইন্স সার্ভিসের।

যেখানে থাকবে হালাল খাবার, পানীয়সহ অন্যান্য ব্যবস্থাসমূহ। সব পরিকল্পনার পর একদিন ঘোষণা দিয়েই চালু করেন বিশ্বের প্রথম এয়ারলাইন্স ‘ফার্নেস এয়ারওয়েইজ’। এয়ারলাইন্স সার্ভিস চালু করলেও তার ছিলো না কোনো উড়োজাহাজ বা রুট পার্মিট।

তাই কাগজের এয়ারলাইন্সকে বাস্তুবে রূপ দিতে উঠে পড়ে লাগলেন তিনি। কাজী সাইফুর প্রথমে চেয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় খচর। এতো খরচের ভার বহন করতে পারবেন না জেনে তিনি পরিকল্পনা পরিবর্তন করে মনোযোগ দেন যুক্তরাজ্যের আভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সার্ভিসমূহে। যোগাযোগ করতে শুরু করেন বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানি এবঙ্গ এয়ারপোর্টসমূহের সাথে।

মার্কেটিং এর জন্য নিজেরে পুরাতন গাড়িটিকেই ব্র্যান্ডিং করে ফেলেন। আর প্রচারণার জন্য ব্যবহার করতে থাকেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। ইতিবাচক মন্তব্যের পাশাপাশি মুখোমুখি হতে থাকেন অনেক নেতিবাচক মনোভাবের। কেউ সামনে এগিয়ে গেলে পেছন থেকে টেনে ধরার লোকের অভাব হয় না এমনিতেও। একটা সময়ে অনেকেই সরে আসতে থাকেন তার সাথে করা ব্যবসায়িক চুক্তি থেকে। এই অপ্রত্যাশিত ধাক্কায় কিছুটা হতাশামগ্ন হয়ে পড়ে সাইফুর।

হতাশা কাটাতে চলে আসেন মাতৃভূমি বাংলাদেশে। দেশ থেকে ফিরে গিয়ে নতুন উদ্যোমে কাজ করা শুরু করেন। পুনরায় ভাবতে থাকেন কীভাবে তার স্বপ্নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে তিনি এবার চিন্তা করে ছোট উড়োজাহাজ নিয়ে কাজ করার। এই এয়ারলয়াইন্সটি পরিচালনা করছে ১৯ সিটের একটি চার্টাড এরোপ্লেন।

ফার্নেস এয়ারলাইন্সের জন্য তিনি চুক্তিবদ্ধ হোন ছোট চার্টাড উড়োজাহাজ কোম্পানির সাথে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম আকাকশে উড়লো ফার্নেস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। এটাই বা কম কিসে? আমরা অনেকেই ভুলে যাই যে, নিজের অর্জিত জ্ঞান-অভিজ্ঞতার ভিতরেই প্রত্যেকের সাফল্যের বীজ লুকিয়ে থাকে।

প্রয়োজন শুধু সেই জ্ঞান-অভিজ্ঞতাকে ঠিকমতো কাজে লাগানো। মনে মনে শুধু বিশ্বাস রাখতে হবে- যে বিষয়ে আমার জ্ঞান আছে, সেই বিষয়ে চেষ্টা করলে আমি অবশ্যই সফল হবো। এই বিশ্বাস এর কার্যকারিতা না থাকলে ১৩ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি জমানো ছেলেটা টয়লেট ক্লিন করতে করতে এয়ারলাইন্স সার্ভিসের মালিক হয়ে যেতে পারতো না।

কৃতজ্ঞতাঃ ডিবিসি নিউজ

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com