তিনি শুধু শরীরের ডাক্তার না! প্রকৃতিরও ডাক্তার

বুধবার, ০৭ আগস্ট ২০১৯ | ১১:০০ অপরাহ্ণ | 285 বার

তিনি শুধু শরীরের ডাক্তার না! প্রকৃতিরও ডাক্তার

তিনি ডক্টর কাজল কান্তি চৌধুরী। ময়মনসিংহ অঞ্চলের খ্যাতিমান এক সার্জন। ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটালের সার্জারি বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান। পদে, সম্মানে, বয়সে তিনি যতটা বড় দায়িত্বজ্ঞানে তার চেয়েও বেশি প্রখর এই মানুষটা।

ডেঙ্গুরোগের প্রকোপে সারাদেশ যখন পুড়ছে, তখন কিছু দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক লোকের কান্ডজ্ঞানহীনতা সোশ্যাল মাধ্যমে হতাশা ছড়াচ্ছে। মন্ত্রী থেকে মেয়র, সাধারণ থেকে সেলিব্রেটি সবাই কেমন যেন ভোঁতা অনুভূতির হয়ে গেছে আজকাল। ডেঙ্গু এই বছরটায় এসেছে অনেকটা দূর্যোগের মতো।

এই ক্রান্তিলগ্নে মন্ত্রী, সেলিব্রেটিরা পরিষ্কার রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে কি প্রমাণ করার চেষ্টায় আছে কে জানে! অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, নগর মেয়ররা তো শুরু থেকেই প্রমাণ করার চেষ্টায় আছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে। জানি না, তারা মশা বশীভূত করার মন্ত্র আয়ত্ত্ব করে বসে আছেন কিনা! নাহয় কিভাবে এতোবড় এক ক্রান্তিকালে তারা এমন নির্বিকার তামাশা করে গেছেন একের পর এক!

এমন যখন অবস্থা, তখন একজন সার্জন ব্যতিক্রম। তিনি কাজল কান্তি চৌধুরী। এই বছরে ডাক্তারদের এমনিতেও বিরাম নেই। নিজে জ্বর গায়ে নিয়েও রোগীকে সেবা দিচ্ছেন, অসুস্থ নার্স নিজের অসুস্থতা স্বত্তেও রোগীদের জন্য নিজেকে তুচ্ছ করছেন এমন গল্প প্রতিটা হাসপাতালজুড়ে। ডাক্তারদের ভাগ্যে এমনিতে অনেক সমালোচনা জোটে, কিন্তু এই সময়ে তাদের এই ত্যাগকে স্যালুট না জানানো চরম অকৃতজ্ঞতা হবে।

সেই ডাক্তার সমাজের প্রতিনিধি কাজল কান্তি চৌধুরী। ইনি শুধু সেবা কাজেই ব্রতী নন, নিজেই মাঠে নেমে পড়েছেন, অপরিষ্কার ড্রেন, ময়লা জায়গা পরিষ্কার করে বেড়াচ্ছেন। না, তার সাথে চাটুকারের বিরাট বহর নেই। যারা এক ঝাড়ু দিয়ে দশজন মিলে পরিষ্কার শুষ্ক রাস্তায় ঘষাঘষি করার নাটক করে এমন দলে আপনি কাজল কান্তিকে পাবেন না। তাকে পাবেন, প্রচারের আলোর বাইরে।

লোকদেখানো বুলি কিংবা ঝাড়ুদারির শো অফে তিনি নেই। তিনি নিজের মতো করে লোকের জন্য সত্যিকারের কাজটা করে যাচ্ছেন। তাকে দেখে বরং আমার, আপনার এবং আমাদের ‘শো-অফ’ ঝাড়ুদারদের লজ্জা হওয়া উচিত।

সবচেয়ে অসাধারণ ব্যাপার হলো, তিনি এই কাজটা করে যাচ্ছেন ২০১৬ সাল থেকেই। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক হওয়ায় এইদিকে একদিন ড্রেন অপরিষ্কার হলেই সেটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কখনো পানি জমে উপচে উঠার সম্ভাবনা থেকে যায়।

তাই তিনি প্রতিদিন নিজ দায়িত্বে ড্রেন পরিষ্কার রাখার কাজ করেন। গত ১ বছর ধরে তিনি প্রতিদিন স্যার পলিটেকনিক মোড় থেকে শুরু করে বিসিকের মোড় পর্যন্ত ড্রেন পরিষ্কার করে যাচ্ছেন!আমাদের নিজ নিজ এলাকায়, নিজ নিজ আঙ্গিনা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে যে পরিষ্কার করতে পারি এবং এতে যে আমাদের জাত চলে যাবে না সেটাই স্যারের কাছ থেকে বড় শিক্ষণীয় ব্যাপার।

যে জনপ্রতিনিধি নামক ‘শো অফ’ ঝাড়ুদারের সময়ে আমরা বেঁচে আছি, তাদের আশায় বসে থাকলে আমাদের জীবন বিপন্ন হবার সম্ভাবনা আরো বেশি ঘনিভূত হবে।

এই ঝাড়ুদারদের সমালোচনা যেমন অযৌক্তিক নয়, তেমনি একজন কাজল কান্তি চৌধুরীকে দেখেও আমরা শিখতে পারি, নিজের জন্য নিজের চারপাশ বসবাস উপযোগী রাখার যৌক্তিকতা কতখানি! ধন্যবাদ কাজল কান্তি চৌধুরী! নিভৃতে আপনি মানুষের জন্যে যে কাজটা শুরু করলেন, সেই কাজ থেকে নিশ্চয়ই আমরাও শিক্ষা নিবো, শিক্ষা নিবে আমাদের ‘শো-অফ’ ঝাড়ুদারগুলো।

সূত্র: দশ দিগন্ত

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com