মার্কিন হামলায় ইরানি শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানির সঙ্গে ইরাকের প্রভাবশালী আধাসামরিক বাহিনী হাশেদ আল-শাবির উপপ্রধান আবু মাহদি আল-মুহান্দিসও নিহত হয়েছেন।
হাশেদের শাখা কাতায়েব হিজবুল্লাহর দেখভাল করার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়াদের নিয়ে এই গোষ্ঠীটি গঠিত হয়েছে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ইরাকি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
লেবাননের হিজবুল্লাহর কাছ থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে কাতায়েব। দীর্ঘদিন ধরেই তারা মার্কিন বাহিনীর নিশানায় ছিল। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থনে সবার আগে তাদেরই সিরিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।
২০০৯ সালে কাতায়েব হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আখ্যা দেয় ওয়াশিংটন। বলা হয়, ইরাকে অস্থিতিশীলতার জন্য এই গোষ্ঠীটিকে দায়ী করা হয়েছে।
তখন মুহান্দিসকেও সন্ত্রাসী আখ্যা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কুয়েতে ১৯৮৩ সালে মার্কিন ও ফরাসি দূতাবাসে হামলার জন্য তার অনুপস্থিতিতেই তার মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেন দেশটির আদালত।
কাতায়েব প্রধান এক ইরানি নারীকে বিয়ে করে দেশটির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। মার্কিন বিমান হামলার জবাবে মঙ্গলবার বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা ও ভাঙচুর তার নেতৃত্বেই হয়েছে বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে।
ইরাকের উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারও দায়িত্ব পালন করেছেন মুহান্দিস। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই মূল উদ্দেশ্য থাকলেও ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের ওপরও নজর রাখছিলেন তারা।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের খবরে দাবি করা হয়েছে, ২০১৯ সালের জুনে সিরিয়া-ইরাক সীমান্তে একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালায় ইসরাইলি বিমানবাহিনী। তখন আল-কুদস ফোর্স ইরানি অস্ত্র সিরিয়ায় সরানোর চেষ্টা করছিল।
গত বছরের আগস্টে মুহান্দিস অভিযোগ করেন, তার মিলিশিয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সমন্বিত গোপন অভিযান চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। তিনি বলেন, আজারবাইজান থেকে ড্রোন দিয়ে ইরাকে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাই এ হামলা চালানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
প্রকৌশলবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করে শিয়াভিত্তিক দাওয়া পার্টিতে যোগ দেন মুহান্দিস। ১৯৭৯ সালে তখনকার ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে তিনি পালিয়ে সীমান্তবর্তী ইরানি শহর আহভাজে যান। ১৯৮৩ সাল থেকে তিনি বিপ্লবী গার্ডসের হয়ে কাজ শুরু করেন।
আল-কুদস ফোর্সেরও সামরিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন মুহান্দিস। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ২০০৫ সালে মার্কিন হামলাপরবর্তী প্রথম ইরাকি প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহীম আল-জাফরির নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
দাওয়া পার্টির হয়ে ইরাকি পার্লামেন্ট সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বাগদাদ বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালের কাছে দুটো গাড়িতে মার্কিন হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া তিনটি রকেট আঘাত হানে।
এর মধ্যে একটি গাড়িতে ছিলেন জেনারেল সোলেইমানি ও মিলিশিয়া নেতা আল-মুহান্দিস। আর তাদের নিরাপত্তার জন্য ইরাকের প্যারা মিলিটারি ফোর্সের সদস্যরা ছিলেন দ্বিতীয় গাড়িতে।
ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর ঘাঁটিতে মার্কিন হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার পর বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা-ভাঙচুরের দুই দিনের মাথায় এ ঘটনা মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে উত্তেজনাকে নতুনমাত্রা দেবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিবিসি লিখেছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীতে জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে দেয়া হতো জাতীয় বীরের সম্মান। তার কুদস ফোর্স কাজ করে মূলত বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর ‘ফরেইন উইং’ হিসেবে। এই বাহিনী জবাবদিহি করে সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে।
পেন্টাগনের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী বিদেশে তাদের সদস্যদের সুরক্ষার স্বার্থে ‘প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে’ কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেছে। ইরানের ভবিষ্যত হামলা পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়াই ছিল এই আক্রমণের উদ্দেশ্য। বিশ্বের যেখানেই আমাদের নাগরিক ও সম্পদ রয়েছে, তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থাই যুক্তরাষ্ট্র নেবে।
জেনারেল কাসেম সোলেইমানি বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা-ভাঙচুরের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে পেন্টাগন দাবি করে আসছে, যদিও ওই হামলার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে ইরান।
জেনারেল কাসেম নিহত হওয়ার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসার পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার একটি ছবি টুইট করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে ৪ শতাংশ।
সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি | রবি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ |
৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ |
১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ |
২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |
২৯ | ৩০ |
২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Development by: webnewsdesign.com