বিদেশে নারীকর্মী প্রেরণে নীতিমালা না জানলে যাত্রা বন্ধ

রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | ২:১০ পূর্বাহ্ণ | 266 বার

বিদেশে নারীকর্মী প্রেরণে নীতিমালা না জানলে যাত্রা বন্ধ

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে একের পর এক গৃহকর্মীর ফিরে আসার প্রেক্ষিতে কর্মী পাঠাতে একটি নীতিমালা করছে সরকার। সে অনুয়ায়ী এখন থেকে বাংলাদেশি কর্মীরা নিয়োগকর্তার সঙ্গে তার চুক্তির বিষয়টি আগেভাগে না জানলে কর্মীর বিদেশযাত্রা বন্ধ করা হবে।

আর চুক্তির বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি হতে কর্মীকে সম্পূর্ণরূপে জানাতে হবে। বিদেশযাত্রার আগে চুক্তিপত্রটি সংশ্লিষ্ট কর্মীর হাতে দিতে হবে। অন্তত চারটি জায়গায় যাচাইয়ের পর ওই কর্মীকে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স দেয়া হবে।

এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী রবিবার একটি নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শনিবার বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা এ তথ্য জানান। ঢাকার বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।

কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো শুরুর পর থেকে রক্ষণশীল ওই দেশটিতে গৃহকর্তার হাতে নানা ধরনের নির্যাতনের খবর আসতে থাকে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছিল না। এসব নারী দেশে ফিরে আসার পর তাদের মুখে সেখানে যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে আসার পর বিভিন্ন নারী সংগঠন সৌদি আরবে আর নারীকর্মী না পাঠানোর দাবি তোলে।

সৌদি আরবে আর নারী শ্রমিক না পাঠানোর দাবি ওঠে সংসদের বিগত অধিবেশনেও। কয়েকজন সংসদ সদস্যের এমন দাবির পর দেশটিতে নারী গৃহকর্মীদের সমস্যা নিয়ে সরকারও চিন্তিত জানিয়ে জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ সংসদে বলেছিলেন, ‘গৃহকর্মীর বিষয়ে সরকার চিন্তিত। এ ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে।’

বেসরকারি সংস্থা ব্রাকের অভিবাসন প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ১ হাজারের বেশি নারী শ্রমিক বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত এসেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই ফিরেছেন সৌদি আরব থেকে।

সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘নারী কর্মীদের জন্য আমরা নতুন নীতিমালা করছি। রবিবার একটি নির্দেশনা জারি করব। নির্দেশনায় বলা থাকবে স্বাক্ষর করা চুক্তি কর্মীকে বুঝতে হবে। চুক্তির বিষয়গুলো রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মীকে বলবে। আমরা সেটা ৩ থেকে ৪ জায়গায় যাচাই করব।’

‘ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্সের জন্য আমরা দেখব চুক্তি সম্পর্কে কর্মী জানেন কিনা। আবার ওই কর্মী যখন এয়ারপোর্টে যাবেন, সেখানেও আবার যাচাই করা হবে। রিক্রুটিং এজেন্সি যদি কর্মীকে চুক্তি সম্পর্কে বুঝিয়ে না দেয়, কর্মীর সঙ্গে যদি চুক্তিপত্র না থাকে, তাহলে তাকে অফলোড (বিদেশযাত্রা বন্ধ) করা হবে।’

শুধা তাই নয়, সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকেও দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার কাজ চলছে উল্লেখ করে প্রবাসী সচিব বলেন, ‘সেজন্য আমাদের দূতাবাসে রিক্রুটিং এজেন্সি নিবন্ধিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেন কোনো অভিযোগ এলেই আমরা তাদের কালো তালিকাভুক্ত করতে পারি। মেডিকেল ও ট্রেনিং যথাযথভাবে শেষ না করে কর্মীকে বিদেশ পাঠানো হলে রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সৌদি আরবের সব এলাকা একই রকম নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় কর্মী নির্যাতনের ঘটনাগুলো বারবার ঘটে। এসব এলাকায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে রেসট্রিক্টেড’ (সংরক্ষিত) করে দেব।’

সচিব জানান, ইতোমধ্যে ১০০টির বেশি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর যারা ভালো কাজ করবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। এ ছাড়া রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করার কাজ চলছে। এই কাজ আগামী মাসেই এই কাজ শেষ করা হবে।

এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. সারোয়ার আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মূলত নারীকর্মীদের সেফটি (নিরাপত্তা) বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলছে। নারীকর্মীরা যেন বিদেশ গিয়ে ভালো থাকেন সেদিকটা গুরুত্ব দিয়ে তাদের মধ্যে সচেতনা তৈরি করার জন্য নীতিমালা করছে মন্ত্রণালয়।’

‘সবচেয়ে বড় কথা হলো নারীকর্মীরা যেন জেনেবুঝেই বিদেশে যান আর সেখানে ভালো থাকের এটাই আমাদের চাওয়া।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত ৭৪টি দেশে আট লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৩ জন নারীকর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন তিন লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন এক লাখ ২৬ হাজার ১৪৩ জন। ওমানে ৮৫ হাজার ৯১৪ জন ও কাতারে ৩২ হাজার ২৮০ জন। জর্ডানে গেছেন এক লাখ ৫৩ হাজার ২৯১ জন। লেবাননে এক লাখ ৬ হাজার ৪৪৪ জন। আর মরিশাসে ১৮ হাজার ৩৩১ জন নারীকর্মী পাঠানো হয়েছে।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com