মার্ক জাকারবার্গের কমেন্টে প্রশংসায় ভাসছে সেঁজুতি সাহা

রবিবার, ১২ জুলাই ২০২০ | ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ | 225 বার

মার্ক জাকারবার্গের কমেন্টে প্রশংসায় ভাসছে সেঁজুতি সাহা

স্বয়ং বিল গেটস প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, কমেন্টে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। এবার ডা. সেঁজুতি সাহার অর্জনের পালকে যুক্ত হলো নতুন মুকুট। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে। স্বয়ং বিল গেটস তাদের বাবা-মেয়ে জুটিকে নিয়ে তার গেটস নোটে লিখেছিলেন, ফেসবুকে সেটা শেয়ার দেয়ার পর মার্ক জাকারবার্গ কমেন্ট করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন দুজনকে।

বাবা সমীর সাহা এবছর নির্বাচিত হয়েছেন আমেরিকান সোসাইটি অফ মাইক্রোবায়োলজির পুরস্কারের জন্য, গত ২৯ বছরে কোন এশিয়ান যে পুরস্কার পাননি। মেয়ে সেজুঁতি সাহাই বা কম যাবেন কেন, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এই অণুজীববিজ্ঞানী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্য পোলিও ট্রানজিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট মনিটরিং বোর্ডে নিয়োগ পেয়েছেন। ধন্যি বাবার ধন্যি মেয়ে বলে কথা!

বাবা-মেয়ে এবং তাদের টিম মিলে কিছুদিন আগেই করোনাভাইরাসের একটি জিনোম সিকোয়েন্স উদঘাটন করেছিলেন। পুরো দলের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন সেজুঁতি সাহা, যিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালে চাইল্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন এখন। এবার তার অর্জনের পালকে যুক্ত হয়েছে নতুন মুকুট, এই মনিটরিং বোর্ডে বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মহাপরিচালক পর্যায়ে পোলিও সংক্রমণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতির বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।

এই প্রক্রিয়ায় মূলত বিশ্বব্যাপী দেশগুলো কীভাবে জনস্বাস্থ্যের অবকাঠামো বজায় রাখবে, বিশেষ করে প্রয়োজনীয় টিকাদান, বৃহত্তর সংক্রামক রোগের নজরদারি, জরুরি প্রতিক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। ২০১৮ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদের অনুমোদনের পর পোলিও সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এ বছর তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডা. সেঁজুতি সাহা প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়ন পেলেন। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এই ঘটনাটা ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ।

সেজুঁতি সাহাদের গোটা পরিবারটাকেই চাইলে যে কেউ ‘অণুজীববিজ্ঞানী পরিবার’ বলতে পারেন। সেঁজুতি নিজে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মলিকুলার বায়োলজিতে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন।

বাবা সমীর সাহা পারিবারিক ব্যবসার পথে না হেঁটে বেছে নিয়েছেন পড়াশোনাকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগে পড়েছেন, উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন দেশের বাইরে থেকে, সেখানে ক্যারিয়ার না গড়ে দেশকে কিছু দেবেন বলে ফিরে এসেছেন আবার। বাংলাদেশ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।

সেজুঁতির মা সেতারুননাহারও একজন অণুজীববিজ্ঞানী। কিছুদিন আগে তিনি অবসর নিয়েছেন বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে। আর ছোট ভাই সুদীপ্ত সাহাও বোনের মতোই টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীববিজ্ঞান ও গ্লোবাল হেলথ বিষয়ে পড়ছেন।

বিল গেটস যখন এই বাবা-মেয়ের জুটিকে নিয়ে গেটস নোটে লিখেছিলেন, তখন বাংলাদেশের মিডিয়ার নজরে এসেছিলেন তারা। আর করোনার জিনোম সিকোয়েন্স আবিস্কারের পর আরেক দফায় খবরের শিরোনাম হয়েছেন দুজন।

অথচ তারা কিন্ত দেশের জন্য, মানবকল্যানের জন্য অনেক আগে থেকেই অবদান রেখে যাচ্ছেন, নিভৃতে নিজেদের কাজ করে চলেছেন। যেহেতু তাদের এই পেশায় গ্ল্যামার নেই, চাকচিক্য নেই, জনমানুষের আগ্রহও নেই, তাই তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার দরকার পড়েনি কারো।

স্বাস্থ্যখাতে সেজুঁতি সাহার একটা দারুণ অবদানের কথা বলি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে মেনিনজাইটিসের সংক্রমণ হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছিল। তাৎক্ষনিকভাবে এর কোনো কারণ খুঁজে বের করা যাচ্ছিলো না। তখন ডা. সেঁজুতি সাহা উদ্ভাবন করলেন যে, চিকুনগুনিয়ার বিস্তারের কারণেই মেনিনিজাইটিসের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় এবং সে ভাইরাস ছড়ায় মশার মাধ্যমে।

বিস্তারিত জানার জন্য সেঁজুতি তার গবেষণার নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই দরিদ্র দেশসমূহে রোগ নির্ণয়ের জন্য স্বল্পমূল্যের উপকরণে টেস্ট কিট তৈরি করেন সেঁজুতি সাহা। এই গবেষণা শুধু বাংলাদেশই নয়, বরং সাহায্য করেছে দক্ষিণ এশিয়ার মতো দরিদ্র দেশগুলোকেও। উপকৃত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই বাস করে দারিদ্রসীমার নিচে।

প্রিয় সেজুঁতি সাহা, আপনাকে অভিনন্দন! যেভাবে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন, রোগ-বালাই কিংবা মহামারীর সঙ্গে লড়ে চলেছেন নিরন্তর, সেটাকে স্যালুট জানালেও আসলে কম হয়ে যায়। মানুষকে বাঁচানোর জন্য তাদের এই সাধনার গল্পগুলো খুব বেশি মানুষ জানে না। সেঁজুতি সাহারা হয়তো নিজেদের কাজ নিয়ে আড়ালেই থাকতে পছন্দ করেন, কিন্ত আমাদের দায়িত্ব, এই গল্পগুলোকে সামনে নিয়ে আসা, সবাইকে জানানো।

সেজুঁতি সাহাকে ওয়ান্ডার ওম্যান বললে ভুল হবে না বোধহয়। এখন সময়, নিভৃতে থাকা এই মানুষগুলোর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়ার, তাদের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের। তাহলেই আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা দেশের জন্য, মানুষের জন্য নিজেদের উজাড় করে দেয়ার ইচ্ছেটা বুকের ভেতর পুষে রাখবে, অজস্র তরুণ-তরুণী সেঁজুতি সাহার মতো হতে চাইবে।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com