স্বর্ণ নয়, লোহা মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৯ | ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ | 474 বার

স্বর্ণ নয়, লোহা মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

একজন নারীর জন্য স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান ধাতু হলো আয়রন। আর এই আয়রনের ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ করা সম্ভব সঠিক খাদ্যাভাসের মাধ্যমে। ক্যাপশনটা কনফিউজিং হলেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কারণ বর্তমান সময়ে নারীদের এক সাথে ঘর বাহির সামলাতে হয়।নিজে সুস্থ,সবল না থাকলে এসব প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।শরীরের সুস্থতার জন্য ৬টি প্রধান খাদ্য উপাদানের একটি খনিজ। আর খনিজ নামক মূল উপাদানটির অন্যতম হলো আয়রন বা লৌহ। এটি আমাদের খাদ্যতালিকায় একটি অঅত্যাবশকীয় উপাদান। একজন নারীর প্রতিদিন কমপক্ষে ১৮মিলিগ্রাম আয়রন গ্রহণ করা প্রয়োজন। মাসিকের সময় এবং দুগ্ধদানকালে এর চাহিদা আরও কিছুটা বেশি হয়। গর্ভাবস্থায় এর চাহিদা প্রায় ২৭মিলিগ্রামের মত হয়।

শরীরে আয়রনেরর কাজঃ রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য আয়রন অত্যাবশকীয়।হিমোগ্লোবিনের মাধ্যেমে আমাদের পুরো শরীরে অক্সিজেন প্রবাহিত হয়। তাই শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে হিমোগ্লোবিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়।

অসংখ্য এনজাইমের অংশ হিসেবে অক্সিডেশন – রিডাকশন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় আয়রন।

জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রন ট্রান্সফার সিস্টেমের জন্য প্রয়োজন আয়রন।

শারীরিক শক্তি,মাংস পেশীর সুগঠন এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যথাযথ কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন আয়রন।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতেও শরীরকে প্রস্তুত করে আয়রন।

মায়ের পেটে থাকা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আয়রনের অভাবে যেসব শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়ঃ

অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন পৌঁঁছানোর কাজ করে। আয়রন কমে গেলে মানুষের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। স্বাভাবিকের চেয়ে কম কাজ করলেও ক্লান্ত লাগে। আক্রান্ত ব্যক্তির মেজাজ খিটখিটে ও দূর্বল বোধ হয়।

ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়ঃ হিমোগ্লোবিন রক্তের রং লাল করে।যদি দেখা যায় ঠোঁট, মুখের ভেতর মাড়ি,নখ ও চোখের নিচের অংশ সাদা সাদা তবে বুঝতে হবে আয়নের অভাব রয়েছে।

দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ও সংক্ষিপ্ত দমঃ রক্তে অক্সিজেন কম পৌঁছানোর ফলে মানুষ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলে,দম ধরে রাখতে পারে না ও হার্টবিট দ্রুত হয়। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে প্রচন্ড কষ্ট হয়। এতে শরীর ক্লান্ত ও হাঁসফাঁস লাগে।

মাথাব্যথাঃ টানা মাথাব্যথা আয়রনের ঘাটতির ফলে হতে পারে।

স্নায়ুবিক অস্থিরতাঃ মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম পৌঁছানোর কারণে মানুষ সহজেই অস্থিরবোধ করে।ধৈর্য্য ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।

অতিরিক্ত চুল পড়াঃ দৈনিক গড়ে ১০০টা চুল পড়া স্বাভাবিক কিন্তু এর বেশি চুল পড়ার কারণ আয়রনের অভাবের কারণে হতে পারে।

পিরিয়ড ও গর্ভবতী অবস্থায় এর প্রভাবঃ পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তের সাথে প্রচুর আয়রন বের হয়ে যায়।এর ফলে এ সময় শরীরে ফলিক এসিড ও আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়।গর্ভবতী সময়ে বেশিরভাগ নারীই এ সমস্যার সম্মুখীন হন।কেননা গর্ভস্থ শিশু মায়ের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকে।তাই মায়ের খাদ্য তালিকায় যদি পরিমাণ মতো আয়রন না থাকে তাহলে মা আয়রনের অভাবে ভুগে থাকে।

থাইরয়েডের সমস্যাঃ আয়রনের অভাব থাইরয়েডের সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়।যদি দেখা যায় ব্যক্তির পরিশ্রমের ক্ষমতা দিন দিন কমে আসছে,শরীরের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে,ওজন বেড়ে যাচ্ছে শরীর ব্যথা হচ্ছে তবে ধরে নেয়া যায় এসব আয়নের অভাবে শরীরের থাইরয়েডের সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে।

জিহ্বার অদ্ভুত রং ও আকারঃ আয়রনের অভাবে জিহ্বা ফ্যাকাসে হয়ে কালশিটে পরে,দানা উঠে।আকারে পরিবর্তন হয়।কখনো কখনো খুব বেশি মসৃণ হয়ে যায়।

হজমে সমস্যাঃ খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন না থাকলে হজম প্রক্রিয়াকরণে সমস্যা হয়।পেট ব্যথা হয়।শরীর পরিমাণ মতো পুষ্টি পায় না।

স্মৃতিশক্তি হ্রাসঃ অনেক সময় আয়রনের অভাবে ব্যক্তির স্মৃতিশক্তিও দূর্বল হয়ে পড়ে।

আয়রনের অভাব অর্থাৎ রক্তস্বল্পতার চিকিৎসাঃ রক্তস্বল্পতা হলে আয়রন ট্যাবলেট কিনে খেলেই হলো এ ধারণা যুক্তিযুক্ত নয়।এক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো রক্তস্বল্পতার কারণ খুঁজে বের করা। যেমন পেপটিক আলসার,পাইলস বা ক্যান্সার শনাক্ত করা বা কেন মাসিকে রক্তক্ষরণ বেশি হচ্ছে তা শনাক্ত করা।রোগীকে আয়রনের ঘাটতি পূরণে মুখে ট্যাবলেট দেয়া হবে না শিরাপথে ইনজেকশন দেয়া হবে তা রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেন। আবার যদি অপুষ্টি জনিত কারণ হয় তাহলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেওয়াটাই মূল চিকিৎসা। সঙ্গে আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের পরামর্শ দেয়া হয়। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দু’ ধরনের প্রানীজ উৎস ও উদ্ভিজ্জ উৎস।

প্রাণীজ উৎসঃ মাংস,কলিজা,ডিম,টেংরা মাছ,সামুদ্রিক মাছ ও মাছের শুটকি।
উদ্ভিজ্জ উৎসঃ কাচা আম, আমচুর, কালো কচুশাক, ফুলকপির পাতা, ডাটা শাক ও অন্যান্য শাক, ছোলা,কুমড়ার বিচি, ডাল, সেদ্ধ আলু, আনার, আপেল, খেজুর,কাজুবাদাম, কিসমিস, মটরশুঁটি। এছাড়াও ডার্ক চকলেট থেকেও আয়রন পাওয়া যায়।

আমাদের শরীর থেকে প্রতিদিন ১-২ মিলিগ্রাম আয়রন নিয়মিত বের হয়ে যায় মলমূত্র ও ঘামের মাধ্যমে। শুনতে অবাক করা হলেও সত্যি প্রজননক্ষম বয়সী নারীদের প্রতি মাসিকে যে পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয় তার সাথে যে আয়রন ক্ষরণ হয় তার পরিমাণ প্রায় ২০ থেকে ৪০ মি.গ্রা.। আবার প্রত্যেক গর্ভবতী মা তার প্রতিটি গর্ভধারণের ফলে আয়নের ঘাটতিতে ভোগেন প্রায় ৬০০ থেকে ৯০০ মি.গ্রা. সমপরিমাণের। এসব তথ্য থেকে ভালভাবেই অনুমান করা যায় একজন নারীর জন্য স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান ধাতু হলো আয়রন। আর এই আয়রনের ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ করা সম্ভব সঠিক খাদ্যাভাসের মাধ্যমে। কারণ খাদ্যাভ্যাস সুষম হলে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া সম্ভব। প্রয়োজন শুধু কিছুটা সচেতনতা। তাই স্বর্ণে ইনভেস্ট করার আগেও নারীরা ইনভেস্ট করুন আয়রনে।কারণ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।

তথ্যসূত্রঃ মোহাম্মদ মাহির আঞ্জুম (এম.বি.বি.এস) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com