একটি পোশাক কারখানায় তিন বেলা নামাজ বাধ্যতামূলক

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৪:৫৭ অপরাহ্ণ | 245 বার

একটি পোশাক কারখানায় তিন বেলা নামাজ বাধ্যতামূলক

গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় সব কর্মকর্তা, কর্মচারীর জন্য অফিস চলাকালীন প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে যোহর, আসর ও মাগরিবের নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

৯ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক নোটিশে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই তিন ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাঞ্চ মেশিনে পাঞ্চ করতে হবে। যদি কোনো স্টাফ মাসে সাত ওয়াক্ত পাঞ্চ করে নামাজ না পড়েন তবে সেক্ষেত্রে তার বেতন হতে একদিনের সমপরিমাণ হাজিরা কাটা হবে।

মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের এই কারখানার অপারেশন্সবিষয়ক পরিচালক মেসবাহ ফারুকী জানিয়েছেন, এটি শুধু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য। যদিও নোটিশে লেখা, ‘সকল স্টাফ’।

কেন এই নির্দেশ- এ প্রশ্নে ফারুকী বিবিসিকে বলেন, ‘সবাই আমরা নামাজ পড়ি। আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, আমাদের নামাজ পড়া ফরজ। এখানে মুসলমান যারা আছেন, তারা সবাই নামাজ পড়েন। কিন্তু তারা নামাজ পড়েন বিক্ষিপ্তভাবে। কর্মীদের মধ্যে মতভেদ-দূরত্ব কমানোর একটি উপায় হিসেবে কারখানায় নামাজ বাধ্যতামূলক করার এই সিদ্ধান্ত।

‘আমাদের এখানে বিভিন্ন মতভেদের লোক আছে। এখানে একটা টিম হিসেবে কাজ করতে হয়। এখানে ফেব্রিক ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে নিটিং সেক্টরের হয়তো একটা সমস্যা থাকে। একেকজন একেকজনের ওপর দোষারোপ সারাদিন চলতেই থাকে। তো আমি এটার সমাধান হিসেবে চিন্তা করলাম তাদের যদি একসঙ্গে বসানো যায়, একসঙ্গে কিছু সময় যদি তারা কাটায়, তাদের মধ্যে দূরত্বটা কমবে।’

তিনি বলছেন, তার কাছে মনে হয়েছে মসজিদ ছাড়া একসঙ্গে বসানোর কোনো পন্থা তিনি খুঁজে পাননি। ফারুকী তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বাস্থ্যগত একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলছেন, সারাদিন বসে বসে কাজ করায় কোলেস্টেরল বাড়ছে, ডায়াবেটিস বাড়ছে। মসজিদ চারতলায় হওয়াতে কিছুটা ব্যায়ামও হচ্ছে।

নোটিশে একদিনের বেতন কাটার প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘এ এপর্যন্ত কারোর বেতন কাটা হয়নি।’ রফতানির জন্য সরকারের দেয়া জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী জাপান, রাশিয়া ও আমেরিকা অঞ্চলের বেশ কিছু দেশে তাদের ব্যবসা। ২০১৬ সালে তাদের রফতানি আয় ছিল ৯০ মিলিয়ন ডলার।

মূলত গেঞ্জি কাপড়ের নানা ডিজাইনের পোশাক তৈরি হয় এ কারখানায়। প্রতি মাসে তাদের রফতানি ১৮ লাখ পিস পোশাক। মেসবাহ ফারুকী বলছেন, বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, তারা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীকে নামাজ পড়তে বাধ্য করছেন না।

তবে এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ ধরনের নির্দেশনাকে বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আইন কেন? সংবিধানেই তো বলা আছে ধর্ম কারও ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। কোনো আইন দিয়েই এটা বাধ্যবাধকতা দেয়া যায় না। ইসলাম ধর্মও বলে না কারও ওপরে ধর্ম চাপিয়ে দেয়া যাবে। আপনি যেমনটি বলছেন, তেমনটি হলে তো এটা খতিয়ে দেখতে হবে।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলছেন, কর্মীদের বাধ্যতামূলক নামাজ পড়ানোর ঘটনা বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করতে পারে।

‘বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে অনেক সমস্যা থাকার পরেও ক্রেতারা এখনও মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। তাজরিন ও রানা প্লাজায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনার আগে বিদেশি ক্রেতাদেরও এতকিছু জানা ছিল না। কিন্তু কারখানার ভেতরে এরকম আইন যদি তারা করেন, তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে।’

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com