বাবা মায়ের দোয়ার চেয়ে বড়ো কিছু নেই

শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৭:৩২ অপরাহ্ণ | 244 বার

বাবা মায়ের দোয়ার চেয়ে বড়ো কিছু নেই

আমাদের চাচাতো ভাই আফজালুর রহমান অত্যন্ত ভালো মনের একজন মানুষ। ১৯৯৯ সালের পর থেকে আমার লেখাপড়ায় ওনার অবদান অনস্বীকার্য। উনি নিবেদিত প্রান একজন সমাজ কর্মী । যার কর্ম, যার সমাজ দর্শন, যার আদর্শ মানুষকে দূর থেকে আকৃষ্ট করে।

আমাদের বাড়ির সামনের সরকারি রাস্তায় যে সারিসারি গাছ লাগানো আছে, যার ছায়ায় রাস্তায় হেটে যাওয়া পথিকেরা একটু শান্তি খুঁজেন, সে গাছগুলো প্রায় ২০ বৎসর আগে আফজাল ভাইয়ের নিজ পয়সায় এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে লাগানো গাছ।

আমাদের চাচা মরহুম জনাব আব্দুল খালেক ছিলেন সুদর্শন, নীতিবান, প্রথম শ্রেণীর একজন সরকারি কর্মকর্তা ,, গাড়ী একসিডেন্ট করে চাকরি থেকে অবসর নেবার আগে পর্যন্ত আমার চাচা উনার সরকারি দায়িত্ব সততা ও মর্যাদার সাথে যথযতভাবে পালন করে গেছেন।

প্রথম শ্রেণীর ভূমি কমিশনার হলেও চাচা সৎ থাকার কারণে ওনার কোনো জমানো টাকা, নিজস্সো কোনো বাড়ি, গাড়ী ছিলোনা। অসুস্থ অবস্থায় চাকরি থেকে অবসর নেবার পর চাচা প্রায় ১০ বৎসর বেঁচে ছিলেন,, আর এই টানা ১০ বৎসর উনাকে দেখভাল করা, উনার ঔষধ পত্র সবকিছু ঠিক মতো চালিয়ে যেতে চাচার পরিবারের সবাইকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল।

অনেক বৎসর হয় দেশের বাইরে থাকি বলে আফজাল ভাইয়ের সাথে দেখা এবং কথা না হলেও আজও বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি । মা বাবার সেবা করবার জন্য কাউকে যদি জান্নাতে প্রবেশ করতে দেয়া হয় , তবে সে সারিতে যারা থাকবেন , আমাদের চাচাতো ভাই জনাব আফজাল ভাই হবেন তাদের অন্যতম।

চাচা মরহুম জনাব আব্দুল খালিক প্রায় ৬ফুট লম্বা একজন মানুষ ছিলেন, চাচাকে প্রতিদিন, খাইয়ে দেয়া, পস্রাব পায়খানা পরিষ্কার করা, গুসল করানো, পায়ের ব্যান্ডেজ পাল্টিয়ে দেয়া চারটি খানি কথা ছিলোনা। ঘরে অন্য অনেক মানুষ থাকলেও আফজাল ভাই উনার শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিদিন চাচার দেখভাল করতেন। কাজে যাবার আগে চাচার কপালে চুমু দিয়ে বলতেন আব্বা আমি কাজে যাচ্ছি ,, আমার জন্য দোয়া করবেন।

২০০১ সালে আমাদের সৎ, সুদর্শন এবং নীতিবান চাচা জনাব আব্দুল খালিক মারা যান। চাচা মারা যাবার পর গ্রামের বাড়িতে শেষবারের মতো কাফন দিয়ে শরীর ঢেকে দেবার ঠিক আগ মুহূর্তে আফজাল ভাই চাচার মাথার চুল আঁচড়িয়ে দিয়ে কপালে চুমো খেয়ে বলেছিলেন, আব্বা ভালো থাকবেন আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আজ চাচা নাই, কিন্তু চাচার দোয়া ঠিকই আফজাল ভাইয়ের সাথে আছে।

আজকাল আমাদের অনেকেরই অনেক সন্তান আছেন যারা সুসাস্থবান এবং অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকলেও বাবা মায়ের সামান্যতম দেখভাল করতেই হাপিয়ে উঠেন ,, তবে মনে রাখা ভালো,, পৃথিবিতে যদি কারো জন্য কিছু করতেই হয় ,, সবার আগে তা যেন বাবা মায়ের জন্যই করা হয়।

আমরা বড়ো হয়ে গেলে স্বাভাবিক নিয়মেই বাবা মায়েরাও মারা যান,, তবে সুসন্তানদের জন্য বাবা মায়ের করে যাওয়া দোয়া সারাজীবন সন্তানদের আগলিয়ে রাখে। সন্তানদের ভালোর জন্য বাবা মায়ের দোয়ার চেয়ে বড়ো আর কোনো কিছুই নাই।

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com