সবাই যখন সবার মুখোশ খুলে দেয়

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৬:৫০ অপরাহ্ণ | 293 বার

সবাই যখন সবার মুখোশ খুলে দেয়

সম্পর্কের ভিত্তি যদি হয় অনিয়ম, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মন্ত্র যদি হয় স্বার্থের লেনদেন, সম্পর্ক যদি হয় অনৈতিক বিনিময় প্রথা- সে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে নাঙ্গা হয়ে যেতে হয় দুইপক্ষেরই। তারই প্রমাণ মিললো, জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ইস্যুতে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা থেকে ছাত্রলীগকে দুইকোটি টাকা দেয়া হয়েছে এই অভিযোগ উঠে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হয়। সাধারণ ছাত্ররা ‘স্বৈরাচার্যের মাস্টারপ্ল্যানচ্যাট’ নামক আয়োজন করে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ করে। ব্যাঙ্গাত্মক বিতর্ক, গান, কথামালায় জানানো হয় দুর্নীতির কথকথা।

উপাচার্য এবং তার সমর্থনকারীরা আন্দোলনকারীদের উন্নয়ন বিরোধী তকমা দিয়েছিলেন। উপাচার্যের পক্ষের শিক্ষকরা তার পক্ষে মৌন মিছিলও করেন। মানববন্ধন কর্মসূচিও হয়। বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের মানববন্ধন চলাকালে পরিষদের সভাপতি আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, “পদ্মা সেতুর বিষয়ে কুচক্রী মহল যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল, জাহাঙ্গীরনগরেও তা করা হচ্ছে। এই মিথ্যাচার করে উন্নয়নকাজকে বন্ধ রাখতে পারবে না।”

বঙ্গবন্ধুর নামে শিক্ষক পরিষদ, সেই শিক্ষক পরিষদ থেকে দুর্নীতির অভিযোগকে উন্নয়নবিরোধিতা আখ্যা দেয়া হয়। এই ছিল অবস্থা।

অথচ, এখন কি শোনা যাচ্ছে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ এনেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা শোভন রাব্বানীর বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমে তিনি স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, “তারা (শোভন-রাব্বানী) আমার বাসায় এসে কাজের কমিশন দাবি করেছে। বলে, আপনি কিছু বলছেন না কেন? আপনাদের ছাত্রলীগ (জাবি ছাত্রলীগ) বলে ২%, এখনকার দিনে ৪%-৬% নিচে কাজ হয় না। দেশে যে সমস্ত কাজ হচ্ছে ছাত্রলীগ শেয়ার পাচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের অনুমতি আছে। কিন্তু আমি তাদের কথা রাখিনি। আমি বলেছি এত টাকা চলে গেলে ভবন হবে কীভাবে। তাই তারা ক্ষুদ্ধ হয়েছে।”

উল্লেখ্য, উপাচার্য এসব বলার আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন গোলাম রাব্বানী। রাব্বানী বলেছিলেন, ঈদের আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।

বলা হচ্ছে, উপাচার্যের কাছে চাঁদা, উন্নয়নের টাকার ভাগ চেয়ে না পেয়ে শোভন রাব্বানী উপাচার্যের সাথে রুঢ় আচরণ করেন। উপাচার্য ফারজানা ইসলাম আবার এই তথ্য জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী এই অভিযোগ সহ শোভন রাব্বানীর বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হন। কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে এমন আলোচনাও চলছে এখন রাজনীতির মাঠে।

গত ৮ আগস্ট উপাচার্যের সাথে বৈঠক হয় শোভন রাব্বানীর। সেই বৈঠকে তারা উন্নয়ন কাজের পার্সেন্টেজ দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ। রাব্বানী এই ব্যাপারে গণমাধ্যমে বলেন, “ঈদুল আযহার আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন।”

কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, “কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশেই উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সাথে বৈঠকের আয়োজন করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।” রাব্বানীর বিবৃতিতে যে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ উপাচার্যের কাছে পেয়েছে বলে বলা হয়, তারা সেই অভিযোগকে বলছে মিথ্যাচার।

আর উপাচার্যের বক্তব্য হলো, শোভন রাব্বানীকে তিনি ডাকেননি, তারাই এসে চাঁদা চেয়েছেন। এমনকি তিনি যখন হাসপাতালে অসুস্থ তারা সেখানে গিয়েছে দুই তিনশো লোক নিয়ে। রাব্বানী তার বান্ধবী দিয়ে চাঁদার জন্যে ফোন করিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠান উপাচার্য।

সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তি পেয়ে যাওয়ায় নিজেকে বাঁচাতে এখন সবাই সবার পশ্চাতদেশের কাপড় নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে মিথ্যুক বলছে। উপাচার্য শোভন রাব্বানীর বিরুদ্দজে বলছেন, তারা চাঁদা না পেয়ে ক্ষুব্ধ। আর শোভন রাব্বানী তো টাকার এমাউন্ট উল্লেখ করে উপাচার্য আর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নামে দুর্নীতি, উন্নয়নের টাকা অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ করছেন।

কি চমৎকার এই খেলা। এভাবেই সবাই সবার মুখোশ উন্মোচন করছেন এবং আমরা দেখছি কি পূতপবিত্র একেকজন মানুষ! এই তারাই আবার শিক্ষক, তারাই আবার ছাত্রনেতা! কি সৌভাগ্য আমাদের! আলহামদুলিল্লাহ ফর এভ্রিথিং।

সূত্র: দশ দিগন্ত

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com