হঠাৎ গৃহপরিচারিকার বাড়িতে মাশরাফি, স্যালুট জানালেন গ্রামবাসী

রবিবার, ২৫ আগস্ট ২০১৯ | ১০:০০ অপরাহ্ণ | 226 বার

হঠাৎ গৃহপরিচারিকার বাড়িতে মাশরাফি, স্যালুট জানালেন গ্রামবাসী

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গৃহকর্তী বা গৃহমালিকদের দ্বারা গৃহপরিচারিকাদের নির্যাতনের খবর প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু এবার যেটা শোনা তা পুরোটাই উল্টো। গৃহপরিচারিকার গ্রামের বাড়িতে হাফবিল্ডিং ঘর, ভবিষ্যৎ দায়িত্ব নিয়েছেন গৃহের মালিক। আর সেটি কেউ নন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

মেঘালয় ঘেষা সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গৃহপরিচারিকা টুনির বাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের যোগানিয়া কাচারি মসজিদ সংলগ্ন টুনির বাবা আক্কাছ আলীর বাড়িতে বেড়াতে যান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ মাশরাফি।

বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও নিভৃত পল্লীতে দু’টি মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে অতিথি বিশেষ করে ক্যাপ্টেন মাশরাফির আগমণের সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মাশরাফিকে দেখার জন্য সৃষ্টি হয় জনস্রোত। লোকজনের ভিড় সামলাতে পরে মাত্র আড়াই ঘণ্টা অবস্থানের পর শেরপুর ত্যাগ করেন মাশরাফি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের কোরবানির ঈদ মাশরাফির বাসাতে কাটলেও ঈদের পর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসার ইচ্ছে ছিল গৃহপরিচারিকা টুনির। তার সেই ইচ্ছা পূরণে কেবল টুনিকে পাঠানো নয়, নিজের পরিবারের সদস্য মনে করে সাথে গোটা পরিবারের লোকজন নিয়েই টুনির গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন মাশরাফি।

শুক্রবার সকালে বাসা থেকে বের হলেও জুমার নামাজ পথেই আদায় করেন মাশরাফি। জুমার নামাজ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা পরই হঠাৎ দু’টি গাড়ি নিয়ে টুনিদের বাড়িতে হাজির হন টুনিসহ মাশরাফির পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আমিন সিফাত জানান, রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় একটি হাউজিং অ্যাপার্টমেন্টে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত থাকায় আক্কাছ আলীর সাথে ওই অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটে থাকা ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে পরিচয় হয়। ওই পরিচয় সূত্রে প্রায় ৮ বছর পূর্বে হতদরিদ্র আক্কাছ আলীর মেয়ে টুনিকে তার বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে নেন মাশরাফি।

বয়স আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে আক্কাছ আলী ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিদায় নিলেও মাশরাফির বাসাতেই রয়ে গেছেন তার মেয়ে টুনি। দীর্ঘ ৮ বছর সময়কালে মাশরাফির স্ত্রী ও দুই সন্তানের সাথে টুনির গড়ে উঠেছে নিবিড় সম্পর্ক। মাশরাফি ও তার পরিবারও টুনিকে এখন তাদের পরিবারের একজন মনে করেন এবং সেভাবেই তার প্রতিপালন করে আসছেন, সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফির আগমণের বিষয়টি আশেপাশের লোকজন আগে জানতেন না। টুনির বাবা-মা বিষয়টি জানলেও মাশরাফিদের আগমণের বিষয়ে কাউকে কিছু জানাননি। তবে তারা মাশরাফিদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।

তবে নালিতাবাড়ীর যোগানিয়া কাচারি মসজিদ সংলগ্ন টুনিদের সেই বাড়িতে পৌঁছার পর ঘুরে-ফিরে বাড়ির চারপাশের প্রকৃতিকে এক পলক দেখে নাস্তা পর্ব শুরু করতেই এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় হুলস্থুল। মাশরাফির আগমণের খবরে ওই বাড়িতে শুরু হয়ে যায় মানুষের ভিড়। মাশরাফি ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ টুনিদের বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন।

ভক্তরা মাশরাফিকে পেয়ে সেলফি তুলতে ও তার অটোগ্রাফ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে মাশরাফিকে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে যান নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও টুনিদের বাড়িতে হাজির হন।

জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপির আচরণ ও ব্যবহারে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মুকছেদুর রহমান লেবু।

তিনি বলেন, ভাবা যায়? বাসার কাজের মেয়ে এবং সাবেক নিরাপত্তাকর্মীকে খুশি করতে, তাদের মুখে হাসি ফোঁটাতে মাশরাফির মতো এমন একজন সেলিব্রেটি এমন অজপাড়াগাঁয়ে সস্ত্রীক এসেছেন। টুনির বাবা আক্কাছ আলী ক্রিকেট তারকা মাশরাফির বাসার নিরাপত্তাকর্মী থেকে বিদায় নিলেও তার পরিবারের প্রতি মাশরাফির রয়েছে দারুণ মমতা এবং নানা সহযোগিতা।

মুকছেদুর রহমান লেবু আরও বলেন, মাশরাফি আক্কাছ আলীকে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন, তাদের মাথাগোজার জন্য গ্রামের বাড়িতে একটি হাফবিল্ডিং টিনশেড ঘর করে দিয়েছেন। সর্বোপরি মাশরাফি টুনির ভবিষ্যৎ দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এখানে না এলে (মাশরাফি) বিষয়টি আমরা জানতেই পারতাম না। সত্যিই ‘ম্যাস দ্য রিয়েল ক্যাপ্টেন, স্যালুট হিম’।

সূত্র: দশ দিগন্ত

Comments

comments

সোমমঙ্গলবুধবৃহশুক্রশনিরবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০ 

২০১৭ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। নবধারা নিউজ | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Development by: webnewsdesign.com